November 15, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, May 26th, 2022, 8:54 pm

হারিয়ে যাচ্ছে কানসাটের ঐতিহ্যবাহী পানের বরজ, চাষীরা হতাশ

জেলা প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ :

ধ্বংস হতে বসেছে ঐতিহ্যে ঘেরা কানসাটের পানের বরজ। পান চাষীরা বলছে অন্যান্য জেলায় ব্যাপক হারে পানের চাষ হওয়ায়, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের গাফলতি ও জনপ্রতিনিধিদের অনাগ্রহের কারনে দিন দিন কানসাটের বিখ্যাত পানের বরজগুলো ধ্বংস হতে বসেছে। তবে কৃষি বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিগণ বলছেন কেউ আমাদের কিছু না বলায় ঘটনাটি আমাদের অজানা রয়ে গেছে। সরজমিনে গিয়ে কথা হয় পানের বরজওয়ালা টুলু হোসেনের স্ত্রী মোসা: সেতারা বেগমের সাথে। তিনি জানান বাৎসরিক ৬ হাজার টাকা দরে ৬ লাখ টাকায় ১০ বছরের জন্য ১৫ কাঠা জমি বর্গা নিয়ে পানের চাষ করছি। লোকের কামলা না খেটে আমরা স্বামী –স্ত্রী মিলে পানের বরজ নিয়েই সারা বছর ব্যস্ত থাকি।তবে এখন আমরা খুব কষ্টে আছি। কারণ আগের মত আর পান জমিতে ফলে না।পানের দর আগের মত পাই না। আগে পান জেলার বাইরে নাটোর, রাজশাহী,পাবনা, নওগাঁ সহ দেশের বিভিন্ন জেলার কানসাটের পান সরবরাহ করা হতো। এখন বাহিরের জেলাগুলিতেও পানের চাষ হওয়ায় আমাদের কানসাটের পানের চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে।তাছাড়া আমাদের পান চাষীদের জন্য কৃষি অফিস থেকে কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে না। এমনকি পানের ক্ষেত পরিদর্শনেও কোন দিন আসেন না। তিনি আরো জানান বছরের জুন- জুলাই মাসের দিকে পানের চাষ শুরু হয়। প্রথমে জমিতে উপযুক্ত পরিমান খৈল, ইউরিয়া, পটাশ, ডিওপি ও এপিও সহ বিভিন্ন ধরনের সার প্রয়োগ করতে হয়েছে। তাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬/৭ হাজার টাকা। এভাবে বছররে তিনবার সার প্রয়োগ করতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টাকা। তার পর পানের চারা( পানের লতা) মাটিতে পুঁতার কিছুদিন পরই বাঁশের খুঁটি ও মাচা তৈরী করতে হয়েছে তাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। মাঝে মাঝে বিষ  প্রেয়োগ করতে হয়।সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৭৫/৮০ হাজার টাকা।পান উৎপাদন হয় মাসে বড় ধরনের ১শ পণ(৮০টায় এক পণ) মাঝারী ধরনের ১শ পণ মিলিয়ে প্রায় আয় হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ খরচ বাদে বছরে প্রায় ১লাখ টাকা আয় হয়। এ দিয়ে আমাদের সংসার চলে। কানসাটের পানের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এখনো পানের চাষ করছেন পারকানসাট গ্রামের ফুলুু মন্ডলের ছেলে মহিরুদ্দিন ১৫কাঠা,আব্দুর রাজ্জাক ১০কাঠা, মুকুল ১০কাঠা, মহি উদ্দিনের ছেলে কালাম ৫ কাঠা, সাদিকুল ইসলাম ৫কাঠা,আসাদুজ্জামান ৫ কাঠা, শহিদুল ইসলাম ৫ কাঠা পানের চাষ করেছে। তারা বলেন এখনো কানসাট ও পার্শবর্তী মোবারকপুর ইউনিয়নে প্রায় ৭০/৮০জন পান চাষী রয়েছে।তারা জানান আগে আমরা কেউ কৃষি অফিস থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পাইনি। কৃষি বিভাগের কোন অফিসার কোন দিনে আসেনি।আমাদের দাবী সরকারী ভাবে পান চাষীদের ভূর্তকী দিয়ে পান চাষীদের উৎসাহ বাড়াতে হবে। এতে পান চাষ বৃদ্ধির পাশাপাশি কানসাটের পানের পুরাতন ঐতিহ্য ফিরে আসবে। এব্যাপারে কানসাট ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোহিদুল ইসলাম, বকুল উদ্দিন কোন তথ্য দিতে পারেনি এবং তারা পানের বরজ পরিদর্শন করেননি বলে জানান। তবে একই ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান কানসাট ও মোবারকপুর ইউনিয়নে পান চাষীদের সংখ্যা ৩৫জন। তারা বাংলা পান চাষ করেন এবং বছরে হেক্টর প্রতি ১২ টন পান উৎপাদন হয়। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষি বিদ শরিফুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি আমার অজানা। কোন পান চাষী আমার কাছে আসেনি। তাই কোন পরামর্শ দেয়া হয়নি। পান ক্ষেত পরিদর্শন তাদের দায়িত্ব কি না এমন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা: সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল বলেন শুধু শিবগঞ্জ নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য কানসাটের পান। কানসাটের পানের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে পান চাষীদের ভূর্তকী দেয়া সহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন হবে।