September 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, June 19th, 2023, 7:33 pm

হালদায় ডিম ছেড়েছে মাছ

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মৎস্য প্রজননক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে পরিপূর্ণ ডিম ছেড়েছে রুই জাতীয় মাছ।

রবিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে মা মাছ ডিম ছাড়ার পরপরই তা সংগ্রহ করছে শত শত এলাকাবাসী। রাতে উৎসবমূখর পরিবেশে তারা ডিম সংগ্রহ করছেন।

এর আগে রবিবার সকাল থেকে কখনো জোয়ার কখনো ভাটায় কার্প জাতীয় মা মাছের ডিম সংগ্রহে নদীর বিভিন্ন স্থানে তারা নদীতে জাল ফেলে অবস্থান করতে থাকে। দুপুরের দিকে কিছু কিছু স্থানে নমুনা ডিম ছাড়লে আশায় বুক বাঁধে ডিম সংগ্রহকারীরা। অবশেষে রাতে পরিপূর্ণ ডিম ছাড়ে মা মাছ।

এই ডিম সংগ্রহ করতে শত শত নৌকা রাতে হালদায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

আজ সোমবার সকালেও এই ডিম সংগ্রহের কাজ চলবে বলে জানায় হালদার পাড়ের বাসিন্দারা।

নদীর নাপিতের ঘাট, আমতুয়া ও আজিমের ঘাট এলাকা থেকে ডিম সংগ্রহ করা হচ্ছে।

রবিবার মধ্যরাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হালদা নদীর হাটহাজারীর আজিমের ঘাট, আমতুয়া, রামদাস হাট, মোবারখিল এলাকায় ডিম সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।

এর আগে গত ১৮ মে প্রথম দফা নমুনা ডিম ছাড়লেও আবহাওয়া অনুকূল না হওয়ায় সেবার মা মাছ পরিপূর্ণভাবে ডিম ছাড়েনি।

রাতে ডিম সংগ্রহকারী মো. হারুন বলেন, গত প্রায় দেড় মাস ধরে এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে আজ আশানুরূপ ডিম সংগ্রহ করতে পারছি। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবার ডিমের পরিমাণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ সোমবার দিনে আরো ডিম পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।

এদিকে রবিবার দুপুর থেকে জোয়ারের সময় প্রতি নৌকায় ১৫০ থেকে ৫০ গ্রাম নমুনা আসতে দেখা গেছে। দিনভর তারা পুরোদমে ডিম ছাড়বে কি ছাড়বেনা এনিয়ে অনেক ডিম সংগ্রহকারী হতাশায় ভুগছিলেন। কারণ আর মাত্র দুএকদিন সময় আছে চলমান জো’র এবং এ জোঁ এ মৌসুমের শেষ জোঁ। দুই মাস ধরে অন্য পেশা বাদ দিয়ে তারা ডিমের আশায় নদীতে অবস্থান করছেন। অনেকের সংসার চলছে চরম কষ্টে। ধার-দেনা করে পরিবারের ব্যয় মেটাচ্ছেন। তাই ডিম না ছাড়লে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন অনেকে। এমন আশঙ্কা সংগ্রকারীদের মাঝে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও হালদা নদী গবেষক ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী বলেন, শেষ পর্যন্ত শেষ জোয়াতে (১৮ জুন) এসে আজ রাতে হালদা নদীতে রুইকাতলা ডিম ছেড়েছে। ডিম সংগ্রহকারীরা এখন পর্যন্ত যা ডিম সংগ্রহ করেছে (রাত দেড়টা) তা পর্যাপ্ত বা লার্জ স্কেল নয়। রাত অবধি এবং আগামীকাল (সোমবার) পর্যন্ত সময়ে বুঝা যাবে ডিমের পরিমাণ লার্জ স্কেল হলো কিনা।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ অনূকুলে আশা করা যাচ্ছে, রাতে বা চলমান জোঁতে (২১ তারিখের মধ্যে) মা মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়ে দিবে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম রাত ১টার দিকে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে নদীতে মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়েছে। এখন ডিম সংগ্রহের কাজ চলছে। এর আগে সকালে নমুনা ডিম ছেড়েছিল। দিনভর নদীতে ডিম আহরণকারীরা অপেক্ষায় ছিলেন।’

তিনি বলেন,শনিবার থেকে অমাবস্যার জোঁ শুরু হয়েছে। ডিম সংগ্রহকারীরা নদীতে অবস্থান করছে। প্রশাসন সরেজমিনে পরিদর্শন করছে। সরকারি প্রতিটা হ্যাচারী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশা করছি এবার পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম ছাড়বে মা মাছ।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন (বাংলা মাস চৈত্র থেকে আষাঢ়) কর্ণফুলী ও সাঙ্গুর মতো বিভিন্ন নদী থেকে দেশীয় কার্প জাতীয় মাছ, যেমন: রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালি বাউশ হালদায় আসে এবং সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় ডিম ছাড়ে। ডিম ছাড়ার জন্য উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত হতে হয়। তাপমাত্রা, পানি, প্রবল স্রোত ও বজ্রবৃষ্টি ইত্যাদি মা মাছের ডিম ছাড়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে। চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এপ্রিল থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।

এদিকে জালুবায়ু পরিবর্তন, মা মাছ শিকার, নদী দূষণসহ নানা কারণে মা মাছের ডিম দেয়া কমেছে। ২০২০ সালে হালদা থেকে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। পরের দুই বছর তা কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমে যায়।

২০২১ সালে হালদা থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয় সাড়ে আট হাজার কেজি। ২০২২ সালে তা আরও কমে হয় সাড়ে সাত হাজার কেজি৷

—-ইউএনবি