November 15, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, March 15th, 2022, 8:43 pm

‘হাসপাতাল বেডেই মৃত্যু পথযাত্রী প্রেমিকাকে বিয়ে করলেন প্রেমিক’

ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী প্রেমিকা ফাহমিদাকে হাসপাতালের বেডে বসে বিয়ে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন প্রেমিক যুবক মাহামুদুল হাসান।

ফাহমিদা ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পরও সবকিছু জেনে বুঝে এবং স্ত্রীর সকল চিকিৎসার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে বিয়ে করছেন মাহমুদুল হাসান। এ বিয়ের খবরে এলাকাবাসী ও নেটিজনদের মাঝে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।

প্রেম-ভালোবাসার বহু শ্বাশত কাহিনী ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। তেমনি হাসপাতালের বেডে আরেক ভালোবাসার অমর উপাখ্যান রচনা করল হাসান ও ফাহমিদা।

ব্যতিক্রমী এ বিয়ের আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কনে ফাহমিদার নানা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন সাকি। তিনি দুজনের বিয়ের ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার পর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

সাইফুদ্দিন সাকি জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হকের ছেলে মাহমুদুল হাসান নর্থ সাউথ থেকে এমবিএ আর চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়াতে জন্ম নেয়া ফাহমিদা কামাল আইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছে। শিক্ষাজীবনে দুজনের পরিচয়। লাবণ্যময়ী স্মার্ট সুন্দরী তরুণী ফাহমিদাকে ভাল লাগতে শুরু করে হাসানের। এরপর আস্তে আস্তে দুজন প্রেমে জড়িয়ে পরেন। বিয়ে সংসার কত না মধুর স্বপ্ন ঝিলিক দেয় তাদের চোখের কোনায়। কিন্তু হঠাৎ এমন স্বপ্ন সুখের রঙিন উঠোনে ঘনকালো অন্ধকার। সফেদ আকাশ মেঘে ঢাকা বৈরী ঝড়ো হাওয়া সব তছনচ করে দিতে উদ্যত। ফাহমিদার স্বপ্নরাঙা মায়াবী শরীরে বাসা বাঁধে মরণঘাতী ক্যান্সার।

কঠিন এ মরণব্যাধি ধরা পরার পর সঙ্গে সঙ্গে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতালে, পরবর্তীতে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর ডাক্তাররা জানিয়ে দেয়- ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়, ইঙ্গিত দেয় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। পাথর চাপা কষ্ট নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ২১ বছর বয়সী ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করায়। সেখানে চলতে থাকে চিকিৎসা। কিন্তু ক্রমাগত ফাহমিদার শাররীক অবস্থায় অবনতি হতে থাকে।

প্রেমিকা ফাহমিদার অসহ্য কষ্ট ও বুকভাঙ্গা যন্ত্রণা প্রেমিক হাসানের সহ্য হয় না। তাই তিনি ফাহমিদার কষ্ট ভাগ করে নিতে চান। নিজের পরিবারকে নিয়ে এসে প্রস্তাব দেন যে তিনি ফাহমিদাকে বিয়ে করতে চান। মৃত্যু পথযাত্রী ফাহমিদাকে হাসানের বিয়ে করার প্রস্তাবে সবাই হতবিহ্বল। হাসানকে বুঝানোর সব ধরনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসান তার সিদ্ধান্তে অনঢ়।

অবশেষে উভয় পরিবার সম্মত হয়। বিষয়টি জানানো হয় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদাকে। অবিশ্বাস্য প্রস্তাব শুনে ফাহমিদার চোখেমুখে ফুটে উঠে নির্মল স্বর্গীয় হাসি। অবশেষে বিয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়। গত ৯ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালের বেডে বউ সাজিয়ে ১ টাকা কাবিনে বিয়ের আয়োজন হয়।

কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গালায় সোনার হার। বর হাসান পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। আকদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দুজন মিলে কেক কাটে, মালা বদল হয়। খেজুর মিষ্টি খাওয়ানো হয়।

ক্ষণিকের জন্য হলেও মরণঘাতী ক্যান্সারকে জয় করে ফাহমিদা হয়ে ওঠে অন্য এক পৃথিবীর বাসিন্দা।

—–ইউএনবি