নিজস্ব প্রতিবেদক:
বসতভিটাসহ স্বামীর সব সম্পত্তিতে হিন্দু বিধবারা ভাগ পাবেন- উল্লেখ করা ঐতিহাসিক রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ ক্ষেত্রে হিন্দু উইমেন্স রাইটস টু প্রোপার্টি অ্যাক্ট (১৯৩৭ সাল) বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ নাফিউল ইসলাম। তিনি বলেন, বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর ২২ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ হয়েছে। আদালত তার রায়ে বলেছেন, আইনে কোনও সুনির্দিষ্ট সম্পত্তির কথা নেই। ‘সম্পত্তি’ শব্দের অর্থ সব সম্পত্তি যেখানে স্থাবর বা অস্থাবর, বসতভিটা, কৃষিভূমি, নগদ টাকা বা অন্য কোনও ধরনের সম্পত্তি। কৃষিজমি ও বসতভিটার মধ্যে পার্থক্য করার সুযোগ নেই এবং এ ধরনের সম্পত্তি বিধবার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়। এর আগে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর খুলনার হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি নিয়ে করা এক আবেদনের (রিভিশন) শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। মামলার সূত্র ধরে রায়ে আরও বলা হয়েছে, রাজবিহারী ম-লের আগে তার পুত্র অভিমন্যু মারা যান। গৌরী দাসী অভিমন্যুর বিধবা স্ত্রী। বিবাদী গৌরী শুধু বসতভিটার উত্তরাধিকারী এবং তাকে কৃষিজমি থেকে বঞ্চিত করার কারণ দেখা যাচ্ছে না। শ্বশুর মারা যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া বসতভিটায় বাস করেছিলেন গৌরী এবং আপাতদৃষ্টিতে জীবনধারণের জন্য শ্বশুরের কৃষিজমির ওপর নির্ভরশীল তিনি। এই মামলার বিবাদী গৌরী দাসীর ক্ষেত্রে হিন্দু আইনের দায়ভাগা পদ্ধতি প্রযোজ্য। ১৯৩৭ সালের আইনের ৩(১) ধারা অনুসারে, বাবার আগে মারা যাওয়া ছেলের মতোই তিনি (গৌরী) তার শ্বশুরের রেখে যাওয়া সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন। এ মামলায় আদালতে ব্যারিস্টার উজ্জ্বল ভৌমিক এ মামলায় এমিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে মামলা পরিচালনায় সহায়তা করেন। পরে আইনজীবী উজ্জ্বল ভৌমিক বলেন, ১৯৪৭ সালে ইন্ডিয়ান ফেডারেল কোর্টের এ-সংক্রান্ত এক মামলার রায়ে কৃষি জমিতে অংশীদারিত্ব হারায় হিন্দু বিধবা নারীরা। যা পরবর্তীতে ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের আইনে সংযুক্ত করা হয়। তবে আজকের ঐতিহাসিক রায়ের ফলে ৮৩ বছর পর স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার ফিরে পেলেন হিন্দু বিধবা নারীরা। হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে এখন থেকে কৃষি জমিসহ স্বামীর সব সম্পত্তিতে স্ত্রীরা ভাগ পাবেন। প্রসঙ্গত, দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী, হিন্দু বিধবা নারীরা স্বামীর কৃষি জমির ভাগ পান না। অথচ ১৯৯৬ সালে খুলনার হিন্দু বিধবা নারী গৌরীদাসীর নামে কৃষি জমি রেকর্ড হয়। এর বিরুদ্ধে ওই একই বছর খুলনার বিচারিক আদালতে (বটিয়াঘাটা) মামলা দায়ের করেন গৌরীদাসীর দেবর জ্যোতিন্দ্র নাথ মন্ডল। শুনানি শেষে বিচারিক আদালত এই মামলার রায়ে বলেন, হিন্দু বিধবারা স্বামীর অ-কৃষি জমিতে অধিকার রাখলেও কৃষি জমির অধিকার রাখেন না। এরপর সে রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালেই গৌরীদাসী খুলনার জজ আদালতে আপিল আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু বিধবা নারী স্বামীর কৃষি জমির ভাগ পাবেন। এরপর খুলনার জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল শুনানি শুরু হয়। উভয়পক্ষের দীর্ঘ শুনানি এবং এমিকাস কিউরির মতামত নিয়ে হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন
সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ
সাইবার আইনের মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে, গ্রেপ্তাররা মুক্তি পাচ্ছেন
সাবেক এমপি সুজনের জামিন না মঞ্জুর, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ