November 14, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, February 12th, 2023, 8:23 pm

হুঁশিয়ারি দিলেন অভিনেত্রী তমা

অনলাইন ডেস্ক :

ফর্মুলা সিনেমায় সাদামাটা এক যুগ। এরপর সংসার জীবনের কণ্টকময় লাল অধ্যায়। একজন অভিনেতার ফুরিয়ে যাওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট রসদ। অথচ বুমেরাং উদাহরণ তৈরি করে দিলেন তমা। প্রভাবশালী তো বটেই, সাম্প্রতিক সময়ে চরিত্র বিচারে অনাকাক্সিক্ষতভাবে এগিয়ে রয়েছেন এই বহুমাত্রিক অভিনেত্রী। ব্যাক টু ব্যাক আলোচিত ওয়েব কনটেন্ট পেরিয়ে তমা দাঁড়িয়ে আছেন ছোট পর্দার সবচেয়ে বড় নায়ক আফরান নিশোর প্রথম সিনেমার নায়িকা হিসেবেও। গত বছরের আলোচিত ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ কিংবা ‘সাত নম্বর ফ্লোর’ পেরিয়ে চলতি বছরটা যেন নিজের আঁচলে বেঁধে নিয়েছেন অভিনেত্রী। ওয়েব সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’, ওয়েব সিনেমা ‘ফ্রাইডে’ এবং পূর্ণদৈর্ঘ্য ‘সুড়ঙ্গ’; সমসাময়িক অভিনেত্রীদের যন্ত্রণা পোহানোর যথেষ্ট কারণ হয়ে আছে! গত শনিবার দুপুরে এসব নিয়ে কথা হলো মির্জা তনয়ার সঙ্গে। শুরুতেই এক যুগের গ্ল্যামারাস কাঁচের ঘর ভেঙে তমার সাম্প্রতিক নন গ্ল্যামারাস পর্দাচিত্র প্রসঙ্গ। বিষয়টি কি সচেতনভাবেই করা? কারণ, সোশ্যাল হ্যান্ডেলের ছবিতে বা ‘প্রেমের লাড্ডু’ গানচিত্রে এখনও তিনি চোখ ধাঁধানো ফিট! বিপরীতে ওয়েব ফিল্ম ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ কিংবা ‘৭ নম্বর ফ্লোর’-এ ঢুকে গ্ল্যামার শব্দটিকে উড়িয়ে দিলেন তুড়ি মেরে। ‘‘সত্যি বলতে ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ আমাকে পুনর্জন্ম দিয়েছে। আমি যে কাঁচের ঘরে বসবাস করছিলাম, সেটা ভেঙে দিলো। এরপর থেকে মূলত আমি নানামাত্রিক চরিত্রের সন্ধানে নেমেছি। আমি যেমন নেমেছি, আমাকে নিয়েও নতুনকরে ভেবেছেন নির্মাতা-প্রযোজকরা। ফর্মুলা চরিত্র বা কাজের বাইরে এখন আমি প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জর মধ্যে নিজেকে রাখি। আমি তো ছোট আর্টিস্ট। ফলে এতদিন তেমন চ্যালেঞ্জিং চরিত্র পাইনি। আশার কথা, এখন সেটা পাচ্ছি। এটাই আপাতত ভালোলাগা।’’ সাম্প্রতিক চরিত্রগুলো নিয়ে আত্মতৃপ্তি থাকলেও এগুলো বাস্তবায়নে কাঠখড় কম পোড়াতে হয় না নায়িকাকে। প্রসঙ্গক্রমে টেনে আনলেন মুক্তিপ্রতীক্ষিত ওয়েব ফিল্ম ‘ফ্রাইডে’ প্রসঙ্গ। যেটি নাকি দুর্বল হৃদয়ের মানুষদের দেখতে সোজা বারণ করেছেন নির্মাতা রায়হান রাফী! হুঁশিয়ারিতে আরও একধাপ এগিয়ে নায়িকা! ‘এই সিনেমা একা দেখতে হবে। এমনকি আমি আমার মাকে নিয়েও দেখতে পারবো না। বাবা-ভাই তো পরের কথা!’ অনুমেয়, ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে এতোটা ডার্ক এ- বোল্ড নির্মাণ আগে আর হয়নি। যা শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছে বিঞ্জ অ্যাপ-এ। এই কাজটি কতোটা ভয়ংকর; সে সম্পর্কে খানিক ধারণা দিলেন মির্জাকন্যা। ‘কাজটা আমরা টানা করি। ঢাকার বাইরে। শেষ দৃশ্যটা ছিলো টানা ২৪ ঘণ্টা, একটি ঘরে- ঘন অন্ধকারে। সেদিন সকাল ৬টায় আমি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি, পরদিন সকাল ৭টা নাগাদ শুট শেষ হয়েছে। এই পুরোটা সময় অন্ধকারে। যাইহোক, কাজটি শেষ করে ঢাকায় ফিরে আমি টানা তিনদিন নিজের রুমে অন্ধকারে বসে ছিলাম।’ ‘‘আম্মু তো টেনশনে পড়ে গেলেন আমার অবস্থা দেখে। ভাবলেন কী না কি হয়েছে আমার! এরপর আম্মুকে আমার শুটিংয়ের একটা ক্লিপ দেখলাম। তিনি অবাক হয়ে বললেন, ‘তোমরা এটা সত্যিই করেছো!’ এরপর বললেন, ‘ওকে রেস্ট নাও’। কাজটি করতে গিয়ে আমি প্রায় অস্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলাম। এবং এই প্রস্তুতিটা ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে নিচ্ছিলাম আমরা।’’ পাঠকরা অনেকেই জেনেছেন, রাফীর ‘পরাণ’ ছবির মতো ‘ফ্রাইডে’-ও সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। যা বাংলাদেশের আলোচিত একটি ঘটনা। অনেকে হয় তো অনুমানও করে ফেলেছেন এরমধ্যে। তাই তমাকে একটু বাজিয়ে দেখা, অনুমানের সঙ্গে বাস্তবতার মিল কতখানি! ‘হুম অনেকেই অনেক ঘটনা অনুমান করছে। কিন্তু একটি অনুমানও আমাদের গল্পের কাছে-কিনারে নেই। এটাই সবচেয়ে মজা লাগছে। আশা করছি, ছবিটি দেখার পর সবাই অবাক হবেন।’ তমা বলছিলেন, ২০২১ থেকে এই কনটেন্টটির জন্য তিনি নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। শুট করেছেন ২০২২ এর নভেম্বরে। মাঝের এক বছর তিনি অসংখ্য ডার্ক-থ্রিলার ছবি দেখেছেন। সেসব দেখে দেখে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। ‘এটি বিভৎস একটি কনটেন্ট। অভিনেত্রী হিসেবে এটা আমার জীবনের হরিবল এক্সপেরিয়েন্স। কান্ট ফরগেট টাইপ এক্সপেরিয়েন্স। গল্পটি সবাইকে দেখানোর একটাই কারণ, যেন এমন ঘটনা পৃথিবীর কোথাও আর না ঘটে।’ ‘ফ্রাইডে’ ডার্ক-ট্রমা থেকে বেরিয়েই তমা অংশ নেন তানিম রহমান অংশুর ওয়েব সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’ সেটে। মুক্তি প্রতীক্ষিত এই সিরিজ নিয়েও শুরু হলো সোরগোল। অভিযোগ, সালমান শাহ-এর মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের গল্প রয়েছে এতে। যেখানে পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে আছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। এ পর্যন্ত সিরিজটির মূল চরিত্র এটি। তবে এর অন্যতম চরিত্রে রয়েছেন তমা মির্জাও। ধারণা করা হচ্ছে, সালমান শাহ-এর স্ত্রী (সামিরা) অথবা নায়িকা (শাবনূর) চরিত্রে দেখা যাবে তমাকে। যদিও নির্মাতা অংশু আর নায়িকা তমা বিষয়টি নিয়ে খুব একটা কথা বলছেন না। তাছাড়া এরমধ্যে সালমান শাহ পরিবারের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে আইনি ব্যবস্থা। তমার ভাষ্যেও সালমান-অস্বীকারের রহস্য। ‘‘বুকের মধ্যে আগুন’ তো দাউ দাউ করে জ¦লছে এখন! অনেকেই অনেক কথা বলছে। আসলে তেমন কিছু না। ‘৭ নম্বর ফ্লোর’ নিয়েও অনেকে অনেক কথা বলেছে। মুক্তির পর দেখা গেল- এটা নতুন একটা গল্প। এটাও তাই।’’
চরিত্রটি কি তবে অকাল প্রয়াত নায়কের স্ত্রীর? নাকি প্রেমিকার! নাকি তদন্ত কর্মকর্তা অপূর্বর সহযোগী! জবাব স্পষ্ট করলেন না তমা। দেখালেন হইচই কর্তৃপক্ষের বেড়াজাল। ‘এখানে যে চরিত্র, সেটি যে আগে করিনি তা নয়। তবে একটু ডিফারেন্ট ক্যারেক্টার এটা। এর বেশি বলতে পারছি না। হইচই থেকে বারণ আছে। তবে এটা বলতে পারি, অনেক বছর পর একটা মাল্টি কাস্টিংয়ের কাজ করলাম। এত বিগ বাজেট এখনকার অনেক সিনেমাতেও থাকে না, যেটা এই সিরিজে ছিলো।’ হইচই শিগগিরই সিরিজটি উন্মুক্ত করবে। কাছাকাছি সময়ে বিঞ্জ অ্যাপে আসবে ‘ফ্রাইডে’। চলতি বছরের এই অংশে এসে আপাতত দম নেওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল তমার। উপভোগ করার কথা ছিলো আলোচিত দুটি কাজের রিভিউ পড়ে! না, তার আগেই অভিনেত্রী ঢুকে পড়বেন এক যুগের ফিল্মি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজটির ভেতর। কারণ, তার হাত ধরেই রূপালি পর্দায় অভিষিক্ত হচ্ছেন ছোট পর্দার বড় তারকা আফরান নিশো। রায়হান রাফী দুজনকে নিয়ে নির্মাণ করতে যাচ্ছেন ‘সুড়ঙ্গ’। যার জন্য আফরান নিশো ছেড়েছেন নাটকের কাজ, ৬ মাসে ওজন কমিয়েছেন ১৩ কেজি! ‘‘বিষয়টি সত্যিই আমার জন্য টেনশনের বিষয়। একদিকে ‘ফ্রাইডে’ আর ‘বুকের মধ্যে আগুন’ রিলিজ হচ্ছে। একই সময়ে আমি ঢুকে পড়বো ‘সুড়ঙ্গ’-এ! ফলে দুটো কাজের সরাসরি দর্শক রিঅ্যাকশনটা উপভোগ করতে পারবো না। এদিকে ‘সুড়ঙ্গ’ ডিরেক্টর আমাকে বলেছে পাতলা হতে। অথচ টেনশনে পড়ে খেয়ে খেয়ে মোটা হচ্ছি! আশা করছি দ্রুতই ফিট হয়ে উঠবো। হুম, এই কাজটি আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বড় পর্দার জন্য অনেকদিন পর একটা কাজ করছি। আশা করছি ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’র মতো ‘সুড়ঙ্গ’-ও আমার পুনর্জন্মের কারণ হবে। নিশো পছন্দের আর্টিস্ট ছিলেন, এখন পছন্দের কোআর্টিস্ট হলেন। আনন্দ লাগছে। যখন এই তিনটা প্রজেক্টের কথা একসঙ্গে ভাবি, তখন নিজেকে সত্যিই ভাগ্যবান মনে হয়। আমি এই ভাগ্যটাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই শ্রম আর সততার ভেতরে- লম্বা সময়।’’ পুনর্জন্মের এই অধ্যায়ে এসে অভিনেত্রী অস্ফুটস্বরে কৃতজ্ঞতা পেশ করলেন নির্মাতা রায়হান রাফীর প্রতি। যার হাত ধরেই তারুণ্যে ফেরা তমার।