September 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, August 16th, 2024, 7:44 pm

হুমকি ধমকি পরিহার করে আত্মউপলব্ধির দিকে যান : ফারুকী

অনলাইন ডেস্ক :

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সরব ছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আন্দোলন থেকে শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার সব বিষয় নিয়েই কথা বলেছেন এই গুণী নির্মাতা। এবার ১৫ আগস্ট এবং স্বাধীনতা প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গত বৃহস্পতিবার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতেই বঙ্গবন্ধুর সপরিবার হত্যা করা হয়। দিনটি স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসতেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

প্রতিবছরের মত এবারেও ১৫ আগস্ট উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এই কর্মসূচি ঠেকাতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি সংলগ্ন সড়ক ও আশপাশের এলাকা দখল করে রাখে। এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এই ঘটনা কেন্দ্র করে আলোচনা-সমালোচনা চলছেই। এবারে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

শুক্রবার (১৬ আগষ্ট) সকালে এই নির্মাতা ফেসবুক পোস্টে ১৫ আগস্টের ঘটনার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে আহ্বান করেছেন। ফারুকী ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, “এই স্বাধীনতা কি আমরা চেয়েছিলাম”? ৭১-য়ে বিজয়ের পরবর্তী কয়েক মাস এমনকি বছর পর্যন্ত এই একই প্রশ্ন নিশ্চয়ই অনেকেই করেছিলেন। মুক্তিযদ্ধের পর একটা ভেঙ্গে পড়া রাষ্ট্রের নানা রকম বিশৃঙ্খলা দেখে এই প্রশ্ন করার মানুষের অভাব ছিলো না। আমি তো মনে করতে পারি মধ্য আশি পর্যন্ত এই কথা হরহামেশাই মানুষ বলতো। ২৪-য়ের বিজয়ের এক দিন না যেতেই এই প্রশ্ন কেউ কেউ করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর এবং আজকে দুই প্রেক্ষিতেই এর উত্তর- সকল কিছুর পরও স্বাধীনতাই শ্রেয়। স্বাধীনতার চেয়ে শ্রেয় কেবল অধিকতর স্বাধীনতা। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঘটনা উল্লেখ করে ফারুকী আরও বলেন, গতকাল অনেক কিছুই হয়েছে যা নিন্দনীয়। আশার কথা এই যে, ছাত্র নেতারা ইতিমধ্যেই সেটা স্বীকার করে এর পুনরাবৃত্তি না করার আহবান জানিয়েছেন।

ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে গিয়ে ফ্যাসিবাদের টেম্পলেট ইউজ করা যাবে না। কিন্তু আমাদেরকে সময়টাও বুঝতে হবে। এক চরম অস্থির সময় যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদ হঠাও আন্দোলনে অনেক মত-পথের মানুষ ছিলো। তাদের মত-পথ-বিশ্বাস যে এক তা না। বিজয়ের পর স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন মত পথের অ্যাকটিভিস্ট বা অনুসারী ভাবছেন এটা একান্তই তার বিজয়। সুতরাং দেশটা উনি যেভাবে চান সেভাবেই সাজানো হোক। ফলে বিজয়ীদের দিক থেকে কিছু উস্কানী আছে। কেউ কেউ চায় দেশে বঙ্গবন্ধুর নিশানা থাকতে পারবে না। যদিও এই চরম চিন্তা আমাদের আগানোর জন্য ক্ষতিকর বলে আমি মনে করি। এই নিয়ে আগেও লিখেছি। এগুলো কোনো কাজে তো আসেই না, বরং জাঁতি হিসাবে আমাদের দুর্বল করে।

বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল নিয়ে হাজারো প্রশ্ন এবং সমালোচনা থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হিসাবে তাকে মুছে দেয়া যাবে? কিছুকিছু চেষ্টা ফল দেয় না। যেরকম আওয়ামী লীগ প্রাণপণে চেয়েছে বিএনপিকে মুছে দিতে, জিয়াউর রহমানকে রাজাকার বানাতে। পেরেছে? ফারুকী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গে টেনে তিনি আরও বলেন, ঐদিকে উস্কানি আছে শেখ হাসিনার দিক থেকেও। রক্তের দাগ এখনও শুকায় নাই। গুম হওয়া মানুষদের কান্নার রোল এখনও থামে নাই। ১৭ বছরের লুটপাট আর নৈরাজ্যের বিচার এখনো হয় নাই।

দেশ ছাড়ার আগেও যিনি আরও মানুষ খুন করার জন্য সেনাপ্রধানকে চাপ দিচ্ছিলেন, দেশ ত্যাগ করেও জুডিশিয়াল ক্যু করতে চাইলেন, তিনি যখন ডাক দিলেন রাজপথে নামার তখন স্বাভাবিক কারণেই এটা ছাত্র জনতার মধ্যে ভিন্ন বার্তা দিলো। তাদের কাছে মনে হলো শোককে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে ফ্যাসিবাদ ফেরার চেষ্টা করছে। ফলে সব ছাত্র সংগঠন রাস্তায় নেমে আসলো। তারপরের কথাতো শুরুতেই বললাম। দেশের সব মানুষকে আহ্বান করে এই নির্মাতা বলেন, সবার প্রতি তাই আহ্বান, ধৈর্য এবং এমপ্যাথি দেখান দয়া করে। মব-রাজ প্রতিষ্ঠা করবেন না। অন্তর্বর্তী সরকারকে গোছাতে সময় দিন। সরকারকে নিয়ন্ত্রণ নিতে দিন সবকিছুর উপর।

বহু বছরের ফ্যাসিজমের কালে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী যে সব অপরাধ হয়েছে, লুটপাট হয়েছে, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আজকের যে নৈরাজ্যকর অবস্থায় দেশকে আনা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় যেসব অপরাধ হয়েছে সেগুলোর ন্যায্য বিচার আয়োজনে সহায়তা করেন। কিন্তু শৃঙ্খলাও বজায় রাখেন। আওয়ামী লীগের প্রতি আহবান, নিজেদের প্রশ্ন করেন। কিভাবে আপনারা এখানে এসে পৌঁছালেন, ভাবেন। হুমকি ধমকি পরিহার করে আত্মউপলব্ধির দিকে যান। ধন্যবাদ। আই অ্যাম অফ টু ডিজিটাল ডিটক্স। সত্যি সত্যি। এডিটিং শেষ করতে হবে।