অনলাইন ডেস্ক :
টস জিতে বোলিং নেওয়ার পর চিন্তার ভাঁজ পড়ে গিয়েছিল প্যাট কামিন্সের কপালে। সবুজাভ উইকেটে ১৮ ওভারেও ধরা দেয়নি উইকেট! তবে এরপরই শুরু হলো উইকেটের স্রোত। জশ হেইজেলউড ও মিচেল স্টার্কের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভেসে গেল নিউ জিল্যান্ডের প্রতিরোধ। উইকেট পতনের সেই ঢেউ পরে আছড়ে পড়ল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়েও। কিউইদের হয়ে জবাব দিলেন ম্যাট হেনরি।
বোলিং দাপটে প্রথম দিনেই জমে উঠল লড়াই। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিনেই পতন হয়েছে ১৪ উইকেটের। নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ ১৬২ রানেই। নিরাপদ শুরুর পর চরম বিপর্যয়ে এক পর্যায়ে ৬০ রানের মধ্যে ৮ উইকেট হারানো দলকে কিছুটা উদ্ধার করে নবম উইকেটে অর্ধশত রানের জুটি। সিম বোলিংয়ের দারুণ প্রদর্শনীতে হেইজেলউড শিকার করেন ৩১ রানে ৫ উইকেট। দিনটি স্মরণীয় স্টার্কের জন্যও।
৩ উইকেট নিয়ে ডেনিস লিলির ৩৫৫ উইকেট ছাড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ইতিহাসের চতুর্থ সফলতম বোলার এখন তিনি। তবে দিনটি স্বস্তিতে শেষ করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়াও। ৪ উইকেট হারিয়ে তাদের রান ১২৪। ম্যাচের শুরুতে বিশেষভাবে সম্মান জানানো হয় শততম টেস্ট খেলতে নামা কেন উইলিয়ামসন ও টিম সাউদিকে। দুজনর কেউই অবশ্য দিনটি সেভাবে রাঙাতে পারেননি। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে আম্পায়ারিং করতে নামা মারাইস ইরাসমাসকে ‘গার্ড অব অনার’ দেয় দুই দল। হ্যাগলি ওভালের উইকেটে বাড়তি বাউন্স থাকে সবসময়ই।
এই ম্যাচের উইকেটে আছে ঘাসের ছোঁয়াও। টস জিতে বোলিং নেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক কামিন্স। কিন্তু প্রথম উইকেটের জন্য তাদেরকে অপেক্ষা করতে হয় এক ঘণ্টারও বেশি সময়। তিন পেসার হেইজেলউড, স্টার্ক ও কামিন্স বোলিং খারাপ করেননি। কিন্তু টম ল্যাথাম ও উইল ইয়াং নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন শুরুর সময়টা। দ্বাদশ ওভারেই ন্যাথান লায়নের হাতে বল তুলে দেন কামিন্স। এই মাঠে আগের কোনো টেস্টে এত দ্রুত কোনো স্পিনারকে আনা হয়নি আক্রমণে। অবশ্য দুই ওভারেই শেষ হয় তার স্পেল। পরে আর বোলিংয়ের প্রয়োজনই পড়েনি তার। পেসাররাই যে জ্বলে ওঠেন! উইল ইয়াংকে ফিরিয়ে ৪৭ রানের জুটি ভেঙে ব্রেক থ্রু এনে দেন দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা স্টার্ক।
তৃতীয় স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মিচেল মার্শ। এই উইকেটেই লিলির ৩৫৫ শিকার স্পর্শ করেন স্টার্ক। পরে গ্লেন ফিলিপসকে বিদায় করে তিনি ছাড়িয়ে যান কিংবদিন্ত ফাস্ট বোলারকে। স্টার্কের এই দুই উইকেটের মাঝের সময়টায় নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিং গুঁড়িয়ে দেন হেইজেলউড। লাঞ্চের আগে ও পরে মিলিয়ে ৭ ওভারের দারুণ এক স্পেলে উইকেট নেন তিনি ৪টি। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই তিনি বিদায় করেন থিতু হয়ে যাওয়া ল্যাথামকে। দুঃসময়কে পেছনে ফেলার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন এই ওপেনার। কিন্তু ১০০ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ৭ চারে ৩৮ রানে ক্যাচ দেন তিনি উইকেটের পেছনে। এই নিয়ে টানা ১৩ ইনিংসে ফিফটি নেই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের। ওই স্পেলেই রাচিন রাভিন্দ্রা ও ড্যারিল মিচেলকে ফেরানোর পর উইলিয়ামসনকেও বিদায় করেন হেইজেলউড। শততম টেস্টের প্রথম ইনিংসে রান করতে পারেন তিনি ১৭।
আরেকপ্রান্তে ফিলিপসকে বিদায় করার পরের বলে দারুণ ইয়র্কারে স্কট কুগেলাইনকে ফেরান স্টার্ক। একটু প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছিলেন টম ব্লান্ডেল। এই কিপার-ব্যাটসম্যানকে ২২ রানে থামান ক্যামেরন গ্রিন। বিনা উইকেটে ৪৭ থেকে নিউ জিল্যান্ডের রান হয়ে যায় ৮ উইকেটে ১০৭। ম্যাট হেনরি ও টিম সাউদি এরপর পাল্টা আক্রমণে ৫৫ রান যোগ করেন ৪৬ বলের জুটিতে। ২০ বলে ২৬ রান করা সাউদিকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন কামিন্স। ২৮ বলে ২৯ রান করা হেনরিকে থামিয়ে ইনিংস শেষ করে দেওয়ার পাশাপাশি ৫ উইকেট পূর্ণ করেন হেইজেলউড। টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বাদশবার এই স্বাদ পেলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার শুরুটাও খুব ভালো হয়নি। নতুন বলে হেনরি ও সাউদিকে ৮ ওভার পর্যন্ত অবশ্য সামাল দিতে পারেন স্টিভেন স্মিথ ও উসমান খাওয়াজা। নবম ওভারে আক্রমণে আসেন অভিষিক্ত পেসার বেন সিয়ার্স। টেস্ট ক্রিকেটে তার প্রথম বলটিই বাউন্ডারিতে পাঠান স্মিথ। এক বল পরই শোধ তোলেন সিয়ার্স। ভেতরে ঢোকা বল ছেড়ে দিয়ে এলবডিব্লিউ হন স্মিথ। এরপর হেনরির পালা। তিনি বিদায় করেন আরেক ওপেনার খাওয়াজাকে।
মার্নাস লাবুশেন ও ক্যামেরন গ্রিন এরপর গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। দুজনের জুটিতে এগোতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। তবে আবার বাঁধা হয়ে দাঁড়ান সেই হেনরি। জুটি থামে ৪৯ রানে। দারুণ একটি ওভারে গ্রিনকে বারবার অস্বস্তিতে ফেলে শেষ বলে ব্যাট-প্যাডের ছোট্ট ফাঁক গলে বোল্ড করে দেন তিনি। ট্রাভিস হেড ক্রিজে গিয়ে যথারীতি আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পথ বেছে নেন। হেনরির ওভারে ছক্কা ও চার মারেন তিনি। কিন্তু দ্বৈরথে জিতে যান হেনরিই। পুল করার চেষ্টায় ১৯ বলে ২১ রান করে ফেরেন হেড। অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় স্বস্তির খবর অবশ্য লাবুশেনের রানে ফেরা। ফর্ম হারিয়ে ভোগান্তিতে থাকা ব্যাটসম্যান এ দিন লড়াই করে দিন শেষে অপরাজিত থাকেন ৮ চারে ৪৫ রান করে। তার সঙ্গে শেষ সময়টা কাটিয়ে দেন নাইটওয়াচম্যান লায়ন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৪৫.২ ওভারে ১৬২ (ল্যাথাম ৩৮, ইয়াং ১৪, উইলিয়ামসন ১৭, রাভিন্দ্রা ৪, মিচেল ৪, ব্লান্ডেল ২২, ফিলিপস ২, কুগেলাইন ০, হেনরি ২৯, সাউদি ২৪, সিয়ার্স ০*; স্টার্ক ১২-১-৫৯-৩, হেইজেলউড ১৩.২-৪-৩১-৫, কামিন্স ১১-৪-৩৫-১, লায়ন ২-০-৬-০, মার্শ ৩-১-১০-০, গ্রিন ৪-০-২১-১)
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩৬ ওভারে ১২৪/৪ (স্মিথ ১১, খাওয়াজা ১৬, লাবুশেন ৪৫*, গ্রিন ২৫, হেড ২১, লায়ন ১*; সাউদি ৮-১-২৯-০, হেনরি ১৩-৪-৩৯-৩, সিয়ার্স ১১-৩-৩৮-১, কুগেলাইন ৪-১-১৩-০)
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা