এপি, ইসলামাবাদ :
আফগানিস্তানে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১১ লাখ শিশু স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ অপুষ্টির মুখে পড়তে পারে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, ক্রমবর্ধমান খাদ্যাভাবের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের হাসপাতালে আনা হচ্ছে।
গত বছর তালেবান ক্ষমতা দখলের পর জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলো বিশেষ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে লাখ লাখ লোককে খাবার খাইয়ে আফগানিস্তানকে দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচাতে সহায়তা করেছে।
কিন্তু এসব পদক্ষেপ জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। ক্রমান্বয়ে দারিদ্র বাড়ছে।
চলতি মাসে প্রকাশিত এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি এখনও পর্যন্ত আসছে না। ফলে নাজুক শ্রেণি খাদ্যের অভাবে ভুগছে, যার বড় অংশ শিশু।
নাজিয়া জানান, তিনি অপুষ্টিতে চার সন্তানকে হারিয়েছেন। এদের মধ্যে ছিল দুই মেয়ে এবং দুই বছরের কম বয়সী দুই ছেলে।
৩০ বছর বয়সী নাজিয়া বলেন, ‘আর্থিক সমস্যা ও দারিদ্র্যের কারণে চারজনই মারা গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন তার সন্তানরা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন তাদের চিকিৎসা করার জন্য তার কাছে টাকা ছিল না।’
নাজিয়া উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ পারওয়ানের চরকার হাসপাতালে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সঙ্গে কথা বলেছেন, যেখানে তিনি এবং তার সাত মাস বয়সী কন্যা উভয়ই অপুষ্টির জন্য চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিনি জানান,তার স্বামী একজন দিনমজুর। তবে তিনি একজন মাদকাসক্ত এবং তার আয়ও অনেক কম।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলেছে, এই বছর ১১ দশমিক এক মিলিয়ন শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একে ‘মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ততা’ও বলা হয়, যা ২০১৮ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
ইউনিসেফের মতে,‘মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ততা’ হল সবচেয়ে প্রাণঘাতী ধরনের অপুষ্টি; যেখানে খাবারের এত অভাব যে একটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তারা একাধিক রোগের জন্য দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অবশেষে তারা এত দুর্বল হয়ে পড়ে যে তারা পুষ্টি শোষণ করতে পারে না।
আফগানিস্তানে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মোহামেদ এগ আয়োয়া গত সপ্তাহে এক টুইটে লিখেছেন, আফগানিস্তানের হাসপাতালগুলোতে তীব্র অপুষ্টিসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে ভর্তি হওয়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে ১৬ হাজার থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাসে ১৮ হাজার, ২০২২ সালের মার্চ মাসে এ সংখ্যা ২৮ হাজারে উন্নীত হয়েছে।
কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ খরা এবং বছরের পর বছর যুদ্ধের কারণে বিধ্বস্ত আফগানিস্তান ইতোমধ্যেই ক্ষুধার জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিল; কিন্তু আগস্টে তালেবানের অধিগ্রহণ দেশকে সংকটের মধ্যে ফেলে দেয়।
তালেবান সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক উন্নয়ন সংস্থা দেশটি থেকে নিজেদের কার্যক্রম প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে; এতে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে।
লাখ লাখ লোক দারিদ্র্যের মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে এবং নিজেদের পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহের সংগ্রাম করছে।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছরের শেষ নাগাদ প্রায় ৩৮ মিলিয়নের অর্ধেক জনসংখ্যা দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করত। যেহেতু অর্থনীতি ক্রমাগত ভেঙে পড়ছে এবং মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে এই বছর ২০২২ সালের মাঝামাঝি জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
চরকার হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ শরীফ বলেন, দারিদ্র্যের কারণে, ‘গর্ভাবস্থায় মায়েরা সঠিক পুষ্টি পায় না এবং জন্মের পরও শিশুরা ঠিকমতো খেতে পারে না।’
দক্ষিণ কান্দাহার প্রদেশের মিরওয়াইস হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের প্রধান ডা. মোহাম্মদ সেদিক বলেন, গত ছয় মাসে অপুষ্টিতে আক্রান্ত ১১০০ শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৩০ জন মারা গেছে।
কান্দাহার শহরের জামিলা নামের আরেক গৃহিনী বলেন, তার আট মাসের ছেলে মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার পরে মারা গেছে। যদি সাহায্য না পান, তবে তিনি তার অন্য চার সন্তানের জীবনের আশঙ্কা করছেন।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২