November 16, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, December 3rd, 2021, 8:20 pm

১২০০ দৌড়বিদ নিয়ে সিলেটে হয়ে গেল ম্যারাথন

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
ভোরের আলোয় আলোকিত হওয়ার আগেই এই কনকনে শীতে সিলেটের রাজপথে হাজারো মানুষের উপস্থিতি। এমন দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়। পযর্টন নগরী সিলেটে এতো মানুষের উপস্থিতি কারণ একটু ভিন্ন। বিশ্বের জনপ্রিয় দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতে আসা। শুধু সিলেট নয় দেশের নানা প্রান্ত থেকে দৌড়বিদরা শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে কুশিয়ারা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হল সিলেট হাফ ম্যারাথনে অংশগ্রহন করতে আসেন।
শুক্রবার ভোর ৬ টায় সিলেট রানার্স কমিউনিটির আয়োজনে সিলেট হাফ ম্যারাথন শুরু হয়, দৌড়বিদরা সিলেট ঐতিহ্যবাহী ক্বীন ব্রিজ এলাকা থেকে দৌড় শুরু করেন। এই দৌড় সিলেট নগরী হয়ে সিলেট মালনী ছড়া চা বাগান হয়ে শহরতলীর ২২ টিলায় ঘুরে ২১.১ কিলোমিটার দৌড়ে দিয়ে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ফিনিস লাইনে এসে সমাপ্ত হয়। কাল ১০টায় স্টেডিয়ামে পুরুষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান হয় সেখানে সেখানে বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট মেডেল এবং নগদ টাকা উপহার তুলে দেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জনাব জাকারিয়া এবং সিলেট রানার্স কমিউনিটির সদস্য ডা. ওরাকাতুল জান্নাত, মনজুর আহমেদ আরিফ, মোঃ হাসান আহমেদ, মোহাম্মদ মিজান, কামরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবু সালেহ, আলি কামাল সুমন।
এই ম্যারাথনের দুটি বিভাগ ছিলো একটি ২১.১ কিলোমিটার এবং ১০ কিলোমিটার এই দুটি বিভাগে নারী-পুরুষসহ ১২০০ দৌড়বিদ অংশগ্রহন করেন। ২১.১ কিলোমিটারে ১৫ জন নারী ও ৩৩৫ জন পুরুষ মিলে ৩৫০ জন অংশ নিচ্ছেন। ১০ কিলোমিটার বিভাগে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১০ কিলো জেনারেল, ১০ কিলো ৪৫ -৫৫ বয়সীদের জন্য আলাদা বিভাগ আর ৫৬ বছর উর্ধে যারা তাদের আলাদা বিভাগ। ১০ কিলোমিটার বিভাগে ৭০ জন নারী ও ৭৮০ জন পুরুষ মিলে মোট ৮৫০ জন। পুরুষদের ১০ কিলোমিটার বিভাগে ২য় স্থান অর্জন করেন গোলাম রাহাত এবং চ্যাপিয়ন হন সাজ্জাদ হোসেন স্নিগ্ধ।
পুরুষদের ২১.১ কিলোমিটার বিভাগে ৩য় হয়েছেন.মো আলামীন, ২য় মো: আসিফ বিশ্বাস, চ্যাপিয়ন হন এলাহী সরদার। নারীদের ২১.১ কিলোমিটার বিভাগে ৩য় হয়েছেন নাসিফা জাহান ওয়াহাব, ২য় হয়েছেন মৌসুমী আক্তার তন্নি, চ্যাপিয়ন হয়েছেন নাসরিন বেগম। অন্য দিকে নারীদের ১০ কিলোমিটার বিভাগে ৩য় হয়েছে ১১ বছর বয়সী স্নেহা জান্নাত, ২য় হয়েছে ১১ বছর বয়সী আফসানা হালিমা, আর চ্যাপিয়ন হয়েছে আরেক ছোট দৌড়বিদ সাইদা আক্তার রিনা। আর ৫৬ বছর বয়সী উর্দ্ধ নারী বিভাগে চ্যাপিয়ন হয়েছেন মেরিয়ান চৌধুরী। পুরুষদের ৫৬ বছর বয়সী উর্দ্ধ বিভাগে ২য় হয়েছেন ৭১ বছর বয়সী নৃপেন চৌধুরী
৫৪ বছর বয়সী হাসিনা আক্তার বলেন, র্দীঘদিন থেকে আমি ডায়াবিটিসের সমস্যায় ভোগ ছিলাম কিন্তু আমি যখন রানিং শুরু করলাম আমার অনেক ভালো লাগতে শুরু করলো এখন রানিং করার আমার একটা নেশা হয়ে গেছে।আমি আমার পরিবার নিয়ে রানিং করি।এবং যার সাথেই দেখা করি তাকেই রানিং আসার আমন্ত্রন জানাই।মানুষের সুস্থ থাকার জন্য এটা খুব জরুরী।
নৃপেন চৌধুরী বলেন, ৭১ বছর বয়সেও আমি দৌড়াতে পারি, আমি শারিরিক ভাবে সুস্থ আমি সবাইকে হাঁটা এবং দৌড়ানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
আয়োজক কমিটির সদস্য এবং সিলেট রার্নাস কমিউনিটির এডমিন ডা ওরাকাতুল জান্নাত বলেন, তরুণ সমাজকে মাদক ও খারাপ দিক থেকে বিরত রাখতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। আমরা প্রতি বছরই ব্যতিক্রমী আয়োজনের মাধ্যমে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে দৌড়ের প্রতি আকৃষ্ট করছি। এই ধরণের আয়োজনে একেকটা জায়গায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দৌড়বিদ আসেন যা দেশের পর্যটন শিল্পেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। আমরা পরিবেশ বান্ধব এই ধরণের আয়োজন অব্যাহত রাখতে চাই এবং সবাইকে দৌড়ানোতে আসার আমন্ত্রণ জানাই আর আমরা এই ম্যারাথন সফল করার জন্য আমাদের নিজস্ব ১৮০ জন ভলান্টিয়ার কাজ করেছে যারা রোড সেফটির পাশাপাশি ফার্স্ট এইড সাপোর্ট প্রদান করেন।আর বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাতে চাই সিলেটের প্রসাশনকে উনারা আমাদের সকল সহযোগিতা করেছেন এই ম্যারাথন সফল করার জন্য।
তিনি আরও জানান, সিলেট রানার্স কমিউনিটি ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর যাত্রা শুরু করার পর বিভিন্ন ধরণের দৌড় প্রতিযোগিতা ও দৌড়বিদদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের সিলেট মিনি ম্যারাথন ২০১৯ এর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে ব্র্যান্ডস্ল্যান্সার সিলেট হাফ ম্যারাথন ২০২০, জানুয়ারি ২০২১ এ র‌্যাব ফোর্সেস সিলেট হাফ ম্যারাথন ২০২১ এর পর এবারের চতুর্থ বৃহৎ আয়োজন এই হাফ ম্যারাথন।
আমরা ধন্যবাদ জানাই এবারের আয়োজনে যারা পৃষ্টপোষক হিসেবে ছিলেন কুশিয়ারা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হল। এর পাশাপাশি পৃষ্টপোষক হিসেবে আছেন- মেসার্স সুরভী এন্টারপ্রাইজ, ফ্রেশ সিমেন্ট, ফিজা এন্ড কোং, ইউনিপেক্স , লতিফ হলিডেজ, ইবনে সিনা হাসপাতাল, ফাইনেস লাইফস্টাইল, স্বাদ ক্যাফে, এডুওয়াইজ, ব্লুপ আইসক্রিম, এস এম সি প্লাস, বাফেট প্যারাডাইজ, সেনসোডাইন ও একটিভ সাইকেল। তারা সমাজের এই ভালো কাজে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখেন।
আয়োজনের সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জনাব জাকারিয়া বলেন, আমাদের এই কঠিন সময়ে স্বাস্থ সচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই,আমরা মনে করি রানিং মানুষকে সুস্থ রাখে আশা করবো সবাই এই চেষ্টাটাকরবেন।এই অনুষ্ঠানটা খুবই সুন্দর সকল দৌড়বিদদের আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।