November 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, December 12th, 2023, 3:43 pm

১৫ বছরে সাবেক সাংসদ মুরাদের আয় বেড়েছে ৪৬ গুণ

জেলা প্রতিনিধি, ,সাভার:

১৫ বছরে ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের আয় বেড়েছে ৪৬ গুন।

গত ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় ৪৬ গুণ এবং উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ঢাকা-১৯ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মুরাদ। নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত তার নবম ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে দেশের সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হন মুরাদ। এরপর সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ে দীর্ঘ ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে তিনি। তবে পরবর্তী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় মধ্যবর্তী সময়ে তার হলফনামা নেই। এ কারণে এই প্রার্থীর আয় ও সম্পদ ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য পদে থাকাকালে বেড়েছে নাকি পরবর্তী সময়ে বেড়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই প্রার্থীর সর্বমোট বাৎসরিক আয় ছিল মাত্র ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৯ টাকা। সম্প্রতি তার দাখিলকৃত হলফনামায় মুরাদ জং উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে তার বাৎসরিক আয় সর্বমোট ১ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ২৪৬ টাকা, যা প্রায় ৪৬ গুণ বেশি। এর মধ্যে কৃষি খাতে তার আয় উল্লেখ করেছেন ৭ হাজার টাকা, বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান ভাড়া থেকে ১ কোটি ২৯ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮৪ টাকা, ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, এফডিআর থেকে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬২ টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যার মধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা আসতো ব্যবসা থেকে ও বাকিটা সঞ্চয়পত্র ও এফডিআর থেকে।

অন্যদিকে ২০০৮ সালের পর থেকে তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে অন্তত ৬ গুণ। ২০০৮ সালের তার হলফনামায় টাকার অংকে তার মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ ৯ হাজার ৬৬১ টাকা, যা বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯১ টাকায়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দাখিলকৃত হলফনামায় নগদ টাকা উল্লেখ করা হয়েছিল ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৯ টাকা, ব্যাংকে জমা ছিল ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮২ টাকা, কোম্পানির শেয়ার ছিল ৬ লাখ টাকার, সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ছিল ২৫ লাখ টাকা, ২টি গাড়ি ছিল ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের, স্বর্ণালংকার ছিল ২০ ভরি যার অর্জনকালীন মূল্য ছিল ৮০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ছিল ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের। সে সময় তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিলো ৭ লক্ষ টাকা মূল্যের ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ২ লক্ষ টাকার আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী। নির্ভরশীলদের নামে স্বর্ণালংকার ছিল ৩০ ভরি যার মূল্য দেখানো হয়েছিল ৬ লক্ষ টাকা।

বিপরীতে বর্তমান সময়ে এসে এই প্রার্থীর অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯১ টাকায়। যার মধ্যে নগদ টাকার পরিমাণ ৩১ লক্ষ ২১ হাজার ১৪১ টাকা, ব্যাংকে জমা ৫ কোটি ১৭ লক্ষ ৪ হাজার ১৫৮ টাকা, এফডিআর রয়েছে ৪৬ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৪২ টাকা, সঞ্চয়পত্র/স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ২০ লক্ষ টাকা, ২টি গাড়ি রয়েছে ১ কোটি ২৬ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮৫০ টাকা মূল্যের, ৮০ হাজার টাকার ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকার।

এছাড়াও বর্তমানে তার স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদ রয়েছে নগদ ৭৪ লক্ষ ৫৪ হাজার ৭৭০ টাকা, ব্যাংকে জমা রয়েছে ১২ লাখ ২৬ হাজার ৭৬২ টাকা, ৭.৫ লক্ষ টাকা মূল্যের ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ২.৭০ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র।

বর্তমান সময়ে এই প্রার্থীর স্থাবর সম্পদ বেড়ে কৃষিজমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ বিঘা বা ১৩.২ একরে, যার মূল্য দেখানো রয়েছে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৬ টাকা। অকৃষি জমি রয়েছে ১৫ কাঠা যার মূল্য ৪৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৫০ টাকা, একটি মার্কেট যার মূল্য ৯৪ লক্ষ ৭ হাজার ৯২৬ টাকা, দুটি ফ্যাক্টরি শেড যার মূল্য ৩৭ লাখ ৯১ হাজার ৬৬৭ টাকা, ৭টি ফ্ল্যাট যার মূল্য উল্লেখ রয়েছে ১ কোটি ১৭ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামায় স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ না দেখালেও বর্তমানে তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ হিসাবে ৫৯ লাখ ৪০ হাজার ৯০০ টাকার ৪টি ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের স্থাবর সম্পদের উল্লেখ ছিল শুধু ৮৬ হাজার টাকা মূল্যের ১.৭২ একর কৃষিজমি ও ৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা মূল্যের মোট ৫.৬১ একর অকৃষি জমি। তবে ২০০৮ সালে দাখিলকৃত হলফনামায় কোনো ঋণের কথা উল্লেখ না থাকলেও সম্প্রতি দাখিলকৃত হলফনামায় মুরাদ ঋণ দেখিয়েছেন ৫০ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬৩ টাকার।