March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 7th, 2021, 8:47 pm

১৬ বছরেও শেষ হয়নি কিবরিয়া হত্যা মামলার বিচার

ফাইল ছবি

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার পর এবার দীর্ঘসূত্রিতায় বিস্ফোরক মামলাও। দীর্ঘ ১৬ বছরেও শেষ হয়নি হত্যা মামলার বিচার। এই সময়ে মামলায় ১৭১ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৪৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলারও গতিপ্রকৃতি একই পথে। এক বছরে বিস্ফোরক মামলায় ১৯৮ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র পাঁচ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। যে কারণে পরিবারের লোকজনও বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
তবে মামলার বাদী বিচারের আশা নিয়েই রয়েছেন। ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এক বছরে বিস্ফোরক মামলায় ১৯৮ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র পাঁচ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার ধায্য তারিখে বিস্ফোরক মামলায় (২৩২০০৫) সাক্ষ্য দিয়েছেন গ্রেনেড হামলায় আহত হবিগঞ্জের আব্দুর রউফ। সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারক হুমায়ন কবীর তার সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। এদিন সাক্ষ্যগ্রহণকালে সাবেক স্বারাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জিকে গৌছ ছাড়াও মামলার আসামি জঙ্গিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এই ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা দু’টির মধ্যে হত্যা মামলায় ১৭১ সাক্ষীর মধ্যে ৪৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলায় ৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। সাক্ষীর জন্য মামলা দু’টি নিস্পত্তির দিকে যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে মামলার বাদী অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা দু’টির বাদী আমি নিজে। সাক্ষী বিলম্বের মূল কারণ আসামিরা অনুপস্থিত থাকা। ধায্য তারিখে অন্য মামলায় হাজিরা থাকায় অনেক সময় সাক্ষীরা এসে ফিরে যান। যে কারণে মামলা বিচারকার্য দীর্ঘায়িত হচ্ছে। মামলার সাক্ষীর দীর্ঘ তালিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ক্ষেত্র বিশেষে আলামতেও ৪৫ জন সাক্ষী রাখতে দেখা গেছে। এতে করে সাক্ষীর তালিকা দীর্ঘ হয়েছে। তবে সাক্ষী বিলম্বের কারণে মামলার বিচারকার্য ব্যাহত হওয়ার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘মামলার বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আমরা একেবারেই আশা রাখছি না। এ ধরনের একটা মামলা ইফেক্টিভ তদন্ত ছাড়া ভুল তদন্তে বিচার আশা করা যায় না। তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই জড়িত থাকতে পারে! সেই ভয়ে তারা সঠিত তদন্ত করেনি। যে কারণে মামলার ওপর আমাদের ভরসা নেই।
মামলায় অধিক সাক্ষী দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মামলাটি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে কিছু আজেবাজে লোককে জড়িত করেছে। একটি হত্যা মামলা তারা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে, এটাই আমার কাছে আপত্তিকর। আদালত সূত্র জানায়, কিবরিয়া হত্যা মামলায় ১৬ বছরে ১৭১ সাক্ষীর মধ্যে ৪৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর বিস্ফোরক মামলার অভিযোগ গঠন হয়েছেন ১৫ বছর পর ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর। এরপর এক বছরে মাত্র ৫ জন সাক্ষির সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। ২০০৫ সালর ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়াজিত জনসভা শেষে ফেরার পথে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচ জন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা, তিন দফায় তদন্ত করে সিআইডি। ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ প্রথম দফায় শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন বাদী মজিদ খান।
২০০৭ সালে মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য আবারও সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ২০১১ সালের ২০ জুন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতি হান্নানসহ ২৪ জনকে আসামি করে অধিকতর তদন্তের অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ওই বছরের ২৮ জুন শাহ এএমএস কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া এই অভিযোগপত্রের ওপরও না-রাজি আবেদন করেন।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর সিআইডি সিলেট রেঞ্জের সিনিয়র এএসপি মেহেরুন নেছা পারুল সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় পলাতক রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, মোহাম্মদ আলী, বদরুল ওরফে মো. বদরুল, আলহাজ্ব মাওলানা তাজ উদ্দিন ও মো. মুহিবুর রহমান।
আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মিজানুর রহমান মিটু, হাফেজ সৈয়দ নাঈম আহমদ আরিফ প্রকাশ নিমু, বদরুল আলম মিজান, মাওলানা শেখ ফরিদ আহমদ, আব্দুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট, মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, মুহিবুল্লাহ ওরফে মুজিবুর রহমান প্রকাশ অভি ও মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম। এছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জিকে গৌছসহ ১২ জন জামিনে রয়েছেন।