অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বৃহৎ শিল্প গ্রুপকে দেশের একটি বড় বেসরকারি ব্যাংককে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের অনুমতি দেওয়ার পর থেকে ব্যাংকিং খাতের ধস শুরু হয়।
মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় এই ব্যাংকার।
আগে পরিস্থিতি এত খারাপ ছিল না মন্তব্য করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামভিত্তিক ওই বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই সমঝোতার পথে হাঁটা শুরু করে।
নাম উল্লেখ না করলেও ধারণা করা হচ্ছে, তিনি চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টিতে ইঙ্গিত করেছিলেন।
ব্যাংক মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান বলছিলেন, ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে ইসলামী ব্যাংককে ‘জামায়াতে ইসলামীমুক্ত’ করার উদ্যোগ নেয়। সেসময় আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ একটি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এখন ব্যাংকটির ঋণের এক-তৃতীয়াংশ মালিকানা গোষ্ঠী নিয়েছে।
তারল্য সংকটে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত জানতে চাইলে হোসেন বলেন, ‘যতদূর আমি বুঝি, প্রাথমিকভাবে ব্যাংকগুলোকে স্থিতিশীল করার জন্য এসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বোর্ড পুনর্গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে তাদের ঋণযোগ্যতা কমে গিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, প্রথম যখন এই ব্যাংকগুলোতে সমস্যা দেখা দেয়, তখন তা দ্রুত চিহ্নিত করে বিধিনিষেধের আওতায় আনা প্রয়োজন ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা না করে তাদের অর্থ সরবরাহ করে বাঁচিয়ে রেখেছে, যাতে দেশের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এখন এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার দায়িত্ব পড়েছে নতুন সরকারের কাঁধে।
ব্যাংকগুলো বন্ধ করা হলে এর প্রভাব কেমন হতে পারে জানতে চাইলে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়ার অনুমতি ছিল না। কিন্তু বাজার অর্থনীতিতে ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হলে তা বন্ধ হতে দেওয়া উচিত। গত ১০ বছরে অনেক ব্যাংকের অব্যবস্থাপনা হয়েছে। তাদের স্বাভাবিকভাবে বন্ধ করতে দেওয়া হলে মানুষ জানতে পারবে কোথায় নিরাপদে তাদের টাকা রাখতে হবে।’
এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে পদ্ধতিগত সমস্যা রয়েছে। আগের সরকারের প্রায় ৭০ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফলে তারা সব আইন নিজেদের অনুকূলে নিয়ে নেয়।
একজন সাবেক গভর্নরকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘দেশে ব্যাংকিং খাতের উদ্যোক্তারা বড় ব্যবসায়ী। এটা (সংসদ সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে তাদের সম্পৃক্ততা) বড় ধরনের স্বার্থের সংঘাত তৈরি করে। এগুলো এখনই বন্ধ করতে হবে।’
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি