আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে অনেক পণ্য ও সেবার ওপর শুল্কহার ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সব পণ্য ও সেবায় সমানভাবে এই ভ্যাট প্রয়োগের প্রস্তাব থাকলেও পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যাট হার হবে ১৫ শতাংশ, এতে ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হতে পারে।
বর্তমানে এনবিআর বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ২, ৩, ৫ , ৭.৫, ১০ ও ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কিছু খাতে ভ্যাট অব্যাহতি পর্যায়ক্রমে তুলে নিয়ে অভিন্ন ভ্যাট হারের দিকে এগোনোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
বাড়ছে মোবাইল ফোনের কল খরচ
রাজস্ব আদায় বাড়াতে মোবাইল ফোন কলের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবে ইতিবাচক সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে গ্রাহকরা ১০০ টাকা দিয়ে মোবাইল রিচার্জ করলে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ কেটে নেওয়ার পর ৭৩ টাকার কথা বলতে পারেন। আবারও সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো হলে গ্রাহকরা ১০০ টাকার মধ্যে ৬৯ টাকা ৩৫ পয়সার কথা বলতে পারবেন।
গাড়ি আমদানিতে শুল্ক দিতে হবে সংসদ সদস্যদের
বর্তমানে সংসদ সদস্যরা বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানি করতে পারেন। তবে বৈষম্য কমাতে এ সুবিধা বাতিল করতে রাজি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি হাইটেক পার্কের জন্য আমদানি করা যেসব গাড়ি আগে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত, সেসব গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে।
ব্যাগেজ নিয়ম অপরিবর্তিত থাকছে
বর্তমান নিয়মানুযায়ী একজন যাত্রী ৪ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করে ১১৭ গ্রাম স্বর্ণ আনতে পারেন। এনবিআর এটি বছরে একবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেছিল, তবে প্রধানমন্ত্রী এতে ভেটো দেন। প্রতিবার স্বর্ণ আনার সময় কর আদায় করা হবে, এমনকি বছরে একবারের সীমা পার করলেও।
করপোরেট করহার
শর্তসাপেক্ষে করপোরেট কর হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। প্রধানমন্ত্রী উৎপাদনশীল খাতে তালিকাভুক্ত নয় এমন শিল্পে কর সাড়ে ২৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন। তবে অন্য সব খাতে কর অপরিবর্তিত থাকবে।
কৃষি উপকরণ আমদানিতে শুল্ক সুবিধা
কৃষি উপকরণ ও সার আমদানিতে শুল্ক না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর অর্থ হলো এসব পণ্য আমদানিতে খরচ বাড়বে না।
আয়কর মূল্যায়ন
করদাতার হয়রানি কমাতে ও রাজস্ব আদায় বাড়াতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়কেই পরবর্তী বাজেটে স্ব-মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে আয়কর দাখিল করতে হবে। এই পদ্ধতি আয়কর মূল্যায়নগুলো এড়িয়ে যায়, যা বর্তমানে পৃথক করদাতাদের জন্য এবং সংস্থাগুলোর জন্য ঐচ্ছিকভাবে প্রয়োজনীয়। আগামী বাজেটে আয়কর আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাড়ছে না করমুক্ত আয়ের সীমা
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির পরও আসন্ন বাজেটে ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়সীমা বাড়বে না। গত বছর এই সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়।
কর বাড়ছে ধনীদের
রাজস্ব আদায় বাড়াতে বিত্তবানদের ওপর বাড়তি কর আরোপের পরিকল্পনা করছে এনবিআর। ১৬ লাখ টাকার বেশি বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ের করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতি হ্রাস এবং শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ থেকে মূলধনী আয়ের উপর কর ছাড় প্রত্যাহারের পরিকল্পনাও রয়েছে।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। তবে পরে এটি সংশোধন করে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ