অনলাইন ডেস্ক :
দেশের চতুর্বিংশতিতম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পেয়েছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। রাষ্ট্রপতির আদেশে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে তার এ নিয়োগ কার্যকর হবে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বিচারাঙ্গনের সর্বোচ্চ পদে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। ২০ মাস প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন শেষে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অবসরে যাচ্ছেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
তবে সে সময় সুপ্রিম কোর্টে অবকাশে থাকবে বলে গত ৩১ অগাস্ট ছিল বিচারপতি সিদ্দিকীর বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবস। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শপথ নিয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে এসেছিলেন।
গত সোমবার মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১১ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর দেশের বাইরে থাকবেন বলে ওই প্রজ্ঞাপনে জাননো হয়েছিল। পরদিন নতুন প্রজ্ঞাপনে ওবায়দুল হাসানকেই নতুন প্রধান বিচারপতি করার কথা জানানো হল।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকের দায়িত্ব পালন করে আসা বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ইসি নিয়োগের সর্বশেষ সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন। সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, ৬৭ বছর বয়স, অর্থাৎ ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন পালন করবেন।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী মঙ্গলবার রাতে জানান, “প্রধান বিচারপতির শপথ গ্রহণের বিষয়ে আমি অফিসিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি। তবে বর্তমান প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের মেয়াদ যেহেতু ২৫ সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে যাচ্ছে, সে অনুযায়ী আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর নতুন প্রধান বিচারপতির শপথ গ্রহণ হতে পারে। যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে এখন ভ্যাকেশন চলছে, সেহেতু শপথ অনুষ্ঠান দিনের বেলা ১০টা/১১টার দিকে হতে পারে। আর কোর্ট খোলা থাকলে রাতে হত।“
১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানার ছয়াশী (হাটনাইয়া) গ্রামে ওবায়দুল হাসানের জন্ম। তার বাবা আখলাকুল হোসাইন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। তার মায়ের নাম বেগম হোসনে আরা হোসাইন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং অর্থনীতিতে মাস্টার্স করার পর আইনে লেখপড়া করেন ওবায়দুল হাসান। এলএলবি শেষ করে ১৯৮৬ সালে তিনি আইনজীবী হিসেবে জেলা বারের তালিকাভুক্ত হন।
পরে ১৯৮৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের এবং ২০০৫ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ওবায়দুল হাসান।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হিসেবে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০০৯ সালের ৩০ জুন অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে যোগ দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। নিয়ম অনুযায়ী, দুই বছর পর তার নিয়োগ স্থায়ী হয়।
হাই কোর্টে দায়িত্ব পালন কালেই ২০১২ সালের ২৩ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসেবে যোগ দেন দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই সময়ে ট্রাইব্যুনাল থেকে ১১টি যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় আসে।
২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারক হিসেবে পান দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিন বছরের মাথায় তিনি বাংলাদেশের বিচারালয়ের সর্বোচ্চ পদে অসীন হচ্ছেন।
‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র: একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ নামে দুই বই লিখেছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
তার ভাই সাজ্জাদুল হাসান নেত্রকোণা-৪ আসনের সংসদ সদস্য। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব তিনি।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম