November 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, December 12th, 2022, 9:19 pm

২৪০ কোটি টাকা পাচার: চট্টগ্রামের আবু আহমদকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ

এফএনএস: ২৪০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ‘ব্যবসায়ী’ আবু আহমদকে গ্রেপ্তার করতে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, তার বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়েছে। এছাড়া আসামির তদবিরকারক নুর মোহাম্মদ আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। তখন তাকেও আসামিকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ৮ জানুয়ারি ঠিক করেছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। আবু আহমদ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে ২৪০ কোটি পাঁচ লাখ ১৬০ টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ আবু আহমদসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করে সিআইডি। সেই মামলায় গত ৭ ডিসেম্বর আবু আহমদের জামিন আবেদনে তদবির করেন নুর মোহাম্মদ। এতে তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। ১২ ডিসেম্বর তাকে আদালতে সশরীরে উপস্থিত হতে বলা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি আদালতে উপস্থিত হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, চট্টগ্রামের স্বর্ণ চোরাকারবারি আবু আহমেদ ওরফে আবুর হাইকোর্টে জামিন আবেদনে তথ্য গোপন করে প্রতারণা করায় তার তদবিরকারক নুর মোহাম্মদকে শোকজ করে তলব করেছিলেন আদালত। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) নির্ধারিত দিনে তিনি সশরীরে আদালতে উপস্থিত হন। এরপর আবু আহমেদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করায় কনডেম রুল ইস্যু করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা দাখিল করতে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচারিক আদালতে আসামিকে হাজিরের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি হাজির হননি। এ ছাড়া তথ্য গোপন করা হয়েছে। আদালত বুঝতে পেরে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারিয়া বিনতে আলমের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় তাকে (আইনজীবীকে) সতর্কও করা হয়। হাইকোর্ট আইনজীবীকে বলেন, আপনি কার পক্ষে লড়তে এসেছেন আইনজীবী হিসেবে। জীবনের শুরুতেই এমন ক্লায়েন্ট নিয়ে আসলেন? আদালত আরও বলেন, এখন সমাজে কাদের আস্ফালন? এটা কীসের আলামত, আমরা কোথায় যাচ্ছি। শুনানিতে ছিলেন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম আবুল হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন ফারিয়া বিনতে আলম। এদিকে টাকা পাচারের অভিযোগে আবু আহমদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৫ ডিসেম্বর আবু আহমেদের জামিনের শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, জাকির হোসেন ও ফারিয়া বিনতে আলম। কিন্তু শুনানিতে বিচারিক (নিম্ন) আদালতের দেওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তথ্য গোপন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও গুঞ্জন শুরু হলে আদালত থেকে কৌশলে চলে যান আবু আহমেদ। সবশেষ মঙ্গলবারও আদালতে ছিলেন না তিনি। শুনানির সময় তার আইনজীবী আদালতে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বিশেষ আদালতে নথি পৌঁছেনি। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বিশেষ আদালতে নথি পৌঁছানো মাত্র এক ঘণ্টার ব্যাপার। কিন্তু কেন এতদিনেও নথি পৌঁছাল না? এর সুবিধাভোগী আসামি। তাকে সরাসরি কারাগারে পাঠানো হোক। আসামির আইনজীবী ফারিয়া বিনতে আলম বলেন, আসামির কোনো দোষ নেই। রেকর্ড না যাওয়ার কারণে জামিন শুনানি হয়নি। পরে অসুস্থ থাকায় হাজির হতে না পারায় আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। মামলায় বলা হয়, ব্যাংক হিসাব, কাগজপত্র পর্যালোচনা, লেনদেনের ধরণ এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পর্যালোচনায় দেখা যা, আসামিরা একে অন্যের সহায়তায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েকটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে ১২ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণ চোরাচালান ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা এবং হুন্ডির মাধ্যমে ২৪০ কোটি ৫ লাখ ১৬০ টাকা পাচার করেন। এসব টাকা দিয়ে গাড়ি-বাড়ি ও মার্কেটসহ বিভিন্ন সম্পত্তি অর্জন করেছেন।