March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 31st, 2023, 8:40 pm

২৯ ইঞ্চির নাইমার বড় স্বপ্নের পাশে জেলা প্রশাসক

ফরিদপুরের নাইমা সুলতানা পাখি। বয়স ২২ বছর। উচ্চতা ২৯ ইঞ্চি। ওজন ২০ কেজি। তার স্বপ্ন স্বাবলম্বি হওয়া। এই জন্য অভাব অনটনের সংসারে প্রতিনিয়ত করছেন জীবনযুদ্ধ।

ঠিক এসময় তার পাশে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।

পাখির ইচ্ছা ছিল পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটারের কোর্সটি শেষ করে কম্পিউটার পরিচানায় আরও দক্ষ হবে। কিন্তু নিজের কোনো কম্পিউটার নেই। একসঙ্গে এত টাকা দিয়ে কম্পিউটার কেনা সম্ভব নয়। ফলে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিল তিনি।’

ঠিক এমন সময়ে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক।

মঙ্গলবার সকালে পাখি ও তার পরিবারকে ডেকে নেয় জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার। শোনেন তার ইচ্ছার গল্প। তার উচ্চকাঙ্খা শুনে হতবাক হন জেলা প্রশাসক। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাখিকে তার পড়াশোনা এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তাদের দেয়া হয় একটি আধুনিক মানের ল্যাপটপ, শুধু তাই না তার পড়ালেখার খরচ বহন করার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

নাইমা সুলতানা পাখি ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের উলুকান্দা গ্রামের নাদের মাতুব্বর ও সাহিদা বেগম দম্পতির তিন মেয়ের মধ্যে পাখি সবার বড়। গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন পাখি। বর্তমানে ফরিদপুর সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অনার্স (বাংলা) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

বাবা নাদের মাতুব্বর একসময় পাট-ভুষামালের ব্যবসা করতেন। ১২ বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক করে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন তিনি। একেবারেই চলাফেরা করতে পারেন না।

উদ্দীপ্ত এই নাইমা সুলতানা পাখি জানান, ‘বাবা অসুস্থ। সংসারে রোজগারের মতো কেউ নেই। পড়াশোনা তো দূরে থাক ঠিকমতো সংসারই তো চলে না। এরপরও কষ্টের মধ্য দিয়ে পড়া চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষ ছোট হলেও আমার স্বপ্নটা বড়। চাই লেখাপড়া করে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি একটা চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতে। বাবা-মা, বোনদের মুখে হাসি ফোটাতে। কারও করুণা কিংবা ভিক্ষা করে নয়, মাথা উঁচু করে বাঁচবো। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সমাজের দৃষ্টান্ত হতে চাই।’

জেলা প্রশাসকের এই সহায়তার বিষয়ে পাখি বলেন, আমার পাহাড় সমান স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেবতার মতো হয়ে পাশে দায়িছেন জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান স্যার । তার এই সহযোগিতা হয়তো আমাকে আমার লক্ষে নিয়ে যাবে।

পাখির মা শাহিদা বেগম বলেন, ‘স্বামী অসুস্থ অবস্থায় দীর্ঘদিন ঘরে পড়ে আছে। তিন মেয়ের পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ চালাতে খুবই কষ্ট হয়। পাখির স্বপ্ন পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু আমাদের সামর্থ্য নেই।

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই, আমার এই অবহেলিত মেয়েটির পাশে দাড়িয়েছেন।

নাইমা সুলতানা পাখির প্রসঙ্গে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, পাখির স্বপ্ন ও তার পরিবারের অভাব অনাটনের খবর পাওয়ার পর তাদেরকে অফিসে ডেকে নিয়ে আসি। শুনে আমি হতবাক মেয়েটির স্বপ্ন কত বড়। এত কষ্টের মধ্যেও সে নিজেকে স্বাবলম্বি করতে চায়। এই কারণ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করেছি কিছুটা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে এবং তার পড়ালেখা শেষ হলে যোগ্যতানুযায়ী চাকরি ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।

—-ইউএনবি