November 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, March 15th, 2023, 8:39 pm

২ হাজারেরও বেশি আফগান এখনও আমিরাতের আটককেন্দ্রে: এইচআরডব্লিউ

অনলাইন ডেস্ক :

সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্তৃপক্ষ দেশছাড়া প্রায় দুই হাজার ৭০০ আফগান নাগরিককে নির্বিচারে ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এসব আফগানদের অন্যত্র পুনর্বাসন বা শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার আইনি পথও খোলা নেই বলে জানিয়েছে তারা। এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমিরাত হিউম্যানিটারিয়ান সিটিতে থাকা আফগানদের বেশিরভাগই হতাশা এবং নানা ধরনের মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন, তারা আইনি পরামর্শের সুযোগ পাচ্ছেন না এবং তাদের শিশুরাও পর্যাপ্ত শিক্ষা সুবিধা পাচ্ছে না। “তাদের বসবাসের পরিস্থিতিরও ব্যাপক অবনতি হয়েছে। আটকরা (কেন্দ্রে) ব্যাপক ভিড়, অবকাঠামো ক্ষয় এবং পোকামাকড়ের উপদ্রবের কথাও জানিয়েছেন,” আবু ধাবির ওই কেন্দ্র প্রসঙ্গে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। এ বিষয়ে এইচআরডব্লিউ আমিরাতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য চাইলেও তারা সাড়া দেয়নি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। আফগানদের অন্যত্র পুনর্বাসনের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তর এক চিঠিতে মানবাধিকার সংস্থাটিকে জানিয়েছে, আমিরাতের হিউম্যানিটারিয়ান সিটিসহ অন্যত্র থাকা ‘উপযুক্ত’ আফগানদের পুনর্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্থায়ী’ অঙ্গীকার রয়েছে। আমিরাতের কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, ২০২১ সালের অগাস্টে তালেবান কাবুল দখলে নেওয়ার পর আফগানিস্তান ছাড়া হাজারও শরণার্থীকে তারা তাদের দেশে অস্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ করে দিচ্ছেন। “দেশছাড়া আফগানরা যেন নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে থাকতে পারে, তা নিশ্চিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; তাদের পুনর্বাসনে আবু ধাবি মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে কাজ করছে,” বলেছিলেন তারা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ২০ বছরের যুদ্ধ শেষে ২০২১ সালের অগাস্টে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার সমাপ্তির বিশৃঙ্খলাপূর্ণ সময়ে একাধিক বেসরকারি গোষ্ঠী ও আমিরাতের সেনাবাহিনী কয়েক হাজার আফগানকে উড়িয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে আসে। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেওয়ার পরও বেসরকারি অনেক গোষ্ঠীরই ভাড়া করা বিমান চালু ছিল, সেসব ফ্লাইটেও অনেক আফগান দেশ ছাড়েন। ওই দেশছাড়া আফগানদের আমিরাতের হিউম্যানিটারিয়ান সিটি ও তাসামিম ওয়ার্কার্স সিটিতে রাখা হয়, সেখানকার অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সগুলোকে শরণার্থীদের বাসস্থানে রূপান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে অনেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অন্যান্য দেশে পুনর্বাসিত হন। কিন্তু দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৭০০ আফগান অন্যত্র পুনর্বাসনের যোগ্যতা অর্জন করতে না পারায় এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত আমিরাতেই আটকে আছেন, যাকে এইচআরডব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে আটক’ বলে অভিহিত করেছে। “আমিরাতের কর্তৃপক্ষ হাজারেরও বেশি আফগান শরণার্থীকে ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে সংকীর্ণ ঘরে শোচনীয় অবস্থায় আটকে রেখেছে, তাদের আবেদনের অগ্রগতির কোনো আশাও দেখা যাচ্ছে না,” বলেছেন এইচআরডব্লিউ-র সংযুক্ত আরব আমিরাত গবেষক জোয়ে শিয়া। এইচআরডব্লিউ গত বছরের শেষ দিকে আমিরাতে থাকা ১৬ আফগানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। ওই সাক্ষাৎকারে দেশছাড়া আফগানরা বলেছিলেন, তারা অবাধে তাদের থাকার জায়গা ত্যাগ করতে পারেন না। হাসপাতালে বা যে একমাত্র শপিং মলে তাদের যাওয়ার অধিকার রয়েছে, সেখানে গেলেও নিরাপত্তা রক্ষী বা তত্ত্বাবধানকারীদের নজরদারিতে থাকতে হয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আমিরাতি কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক আইন এবং আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নির্দেশনা না মেনে ওই আফগানদের ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ আটকে রেখেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক ঘোষণায় স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। এইচআরডব্লিউ দেশছাড়া ওই আফগানদের তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দিতে, আশ্রয়ের আবেদন ও সুরক্ষা নিশ্চিতের প্রক্রিয়ায় তাদেরকে সংযুক্ত করতে এবং তাদের আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা যেখানে থাকতে চায়, সেখানে থাকার অনুমতি দিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আমিরাতে ‘আটক থাকা’ আফগানদের মুক্তি এবং শরণার্থী হতে বা মানবিক প্যারোলের যে কোনো আবেদন নিষ্পত্তি ত্বরান্বিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তাদের হাতে থাকা উপায়গুলো ব্যবহারেও অনুরোধ জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়ে এবং পরে সব মিলিয়ে ৮৮ হাজারের বেশি আফগানকে পুনর্বাসিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বিশেষ অভিবাসন ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াধীন থাকায় মার্কিন সরকারের হয়ে কাজ করা কয়েক হাজার আফগান এখনও তালেবান শাসনাধীন আফগানিস্তানেই রয়ে গেছেন।