November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, August 13th, 2022, 8:36 pm

৩০০ টাকা মজুরি না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারী চা শ্রমিকদের

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

মজুরি বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছেন দেশের বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকরা। এরই ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজারের সবক’টি উপজেলার চা-বাগানগুলোর শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমে সড়ক অবরোধ করেন। এসময় সড়কের দু’পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিকে ৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শনিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে একটি স্মারকলিপি জমা দেন কুলাউড়ার বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকরা।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, চা-শ্রমিকরা কুলাউড়ার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেছেন। সকালে লুয়াইউনি চা-বাগানের শ্রমিকরা মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক সড়কের ব্রাহ্মণবাজার এলাকায়, বরমচাল চা-বাগানের শ্রমিকরা ব্রাহ্মণবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে, লংলা চা-বাগানের শ্রমিকরা ব্রাহ্মণবাজার-শমসেরনগর সড়কের নয়াবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি জমা দেয়ার সময় বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকরা কুলাউড়া হাসপাতালের সম্মুখে সমবেত হন। ফলে সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন শ্রমিকেরা। তবে, দাবি মেনে না নেওয়ায় গত শুক্রবার অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয় চা-শ্রমিক ইউনিয়ন।

শনিবার সকালে কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, রাজনগর, মৌলভীবাজার সদর, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন। এসময় শ্রমিকদের দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে কর্মসূচিতে লুয়াইউনি চা-বাগান থেকে আসা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি বিশ্বজিৎ কৈরী, নারী চা-শ্রমিক সবিতা গড়াইত বলেন, ‘আমাদের দুঃখ কেউ বোঝে না। আমরা ৪ দিন কর্মবিরতি করেছি। কিন্তু কেউ আমাদের এসে আশ্বাস দিলো না। আমরা এত কষ্ট করে কাজ করি, কিন্তু আমাদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। চাল, ডাল, তেল সবকিছুর দাম বেড়েছে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ আছে। অসুখ হলে চিকিৎসা করাতে হয়। এর মধ্যে প্রতিদিনই জিনিসের দাম বাড়ছে। কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ছে না।’

কুলাউড়া থানার ওসি মো: আব্দুছ ছালেক বলেন, কুলাউড়ার কিছু স্থানে সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে চা-শ্রমিকদের বুঝিয়েছি। সেখানে তারা সড়ক অবরোধ না করেই তাদের কর্মসূচি পালন করছেন।

এদিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন কুলাউড়ার দিলদারপুর, ঝিমাই, বিজয়া ও রেহানা চা-বাগানের শ্রমিক ও পঞ্চায়েত কমিটি। এসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ একেএম সফি আহমদ সলমান চা-শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি যথাযথভাবে উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের কাছে গুরুত্ব সহকারে প্রেরণের আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল জানান, ‘পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলছে। দেশের ১৬৬ চা-বাগানে এ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। ৩০০ টাকা মজুরি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর হবে। দেশের বিভিন্ন বাগানের চা-শ্রমিকেরা একত্রিত হয়েছেন। বাগানে বাগানে সমাবেশ হবে।’

বাংলাদেশি চা-সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, ‘মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনা চলাকালে এভাবে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করা বেআইনি। এখন চা-বাগানে ভরা মৌসুম। কাজ বন্ধ রাখলে সবার ক্ষতি। তারাও এই মৌসুমে কাজ করে বাড়তি টাকা পায়।’ মালিকপক্ষের সঙ্গে চা-শ্রমিকদের আলোচনা প্রায় ১৯ মাস ধরে চলছে। কিন্তু, শ্রমিকদের নতুন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না, জানতে চাইলে গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, ‘আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি যাতে তাদের কাজে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়’।