পানি সংকটে কারবালার মাতম চলছে রাজনগরে
জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় বোরো আবাদে তীব্র পানি সংকটে ভুগছেন কৃষকরা। এতোদিনে পানি থাকার কথা বোরো আবাদের জমিতে। এমনকি জমিতে হাল চাষ করে রোপনেরও সময় পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো পানিই আসেনি কৃষি জমিতে। বীজতলায় ধানের চারা হলুদ হতে শুরু করেছে। চারা শক্ত হয়ে গেলে রোপন করেও ফলন পাওয়া যাবেনা বলে আশঙ্কা কৃষকদের। পানি না থাকায় উপজেলার হাজার একর জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। ফলে হতাশায় ভুগছেন উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক। সম্প্রতি পানির জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন কৃষকরা।
কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সোনাটিকি, সুপ্রাকান্দি, জালাই, ছত্রিসের বন্দ, মাঝের কান্দি, আলাইর ডুগরা, জোয়ালভাঙ্গা কান্দি, বৈরাগির বন্দ, আলগরা, খলখলির বান্ধ, বুড়িঝুড়িপাড় বন্দ, পাঁচগাঁও ইউনিয়নের কুঝাড়, বানাইত, বাহাদুরপুর, পশ্চিমভাগ, সৈশ্যসুতার বন্দ, সদর উপজেলার উত্তর ঘড়গাঁও, কর্ণিগ্রামের বন্দসহ প্রায় ৩ হাজার একর জমিতে পানি নেই। ট্রাক্টর পড়ে রয়েছে জমিতে। কৃষকরা পানি পেলে জমিতে চাষ দিবেন এই আশায় বসে আছেন। বীজতলায় চারাগুলোর কোনোটির বয়স দেড়মাস আবার কোনটির আর রোপনযোগ্য নয়। চারার সবুজ পাতা হলুদ হতে শুরু করেছে। তাই উপায় না দেখে কেউ কেউ চারা কেটে নিয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছেন।
জমির সাথে যে সংযোগ খাল রয়েছে তার থেকে অন্তত ১-২ ফুট নিচ দিয়ে শাখা খালের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অথচ এই পানি জমির খাল দিয়ে প্রবেশ করার কথা। খালের পাশে যাদের জমি তারা সেচ দিয়ে পানি তুলে ১-২ বিঘা জমি চাষ করছেন। পুরো মাঠ পড়ে আছে শূন্য অবস্থায়। কয়েকজন কৃষক গুইর বন্দ ও ইলামের কান্দির বিলে ধান লাগিয়েছেন। সেখানেও পানির অভাবে ফাটল দেখা দিয়েছে।
মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সুপ্রাকান্দি গ্রামের কৃষক সৈয়দ জুলফিকার আলী, তাজুল ইসলাম, রহিম মিয়া, খালিছ মিয়া, দুরুদ মিয়া, সৈয়দ মিজান আলী ও সোনাটিকি গ্রামের উজ্জল মিয়া, কুবঝাড় গ্রামের সাব্বির মিয়া জানান, বছরে একবার তারা ধান চাষের সুযোগ পান। সেই ফসলেই তাদের সংসার চলে, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে। গত কয়েকবছর ধরে শাখাখাল দিয়ে পানির প্রবাহ কম থাকায় ধান চাষ করতে পারছেন না। এক সপ্তাহ ঠিকমতো পানি পেলে আপাতত ধান চাষ করা যাবে। পানির জন্য প্রত্যেক বছর ধর্ণা দেন পাউবো অফিসে। তারা শুধু সমাধানের আশ^াস দেন। সময়মতো পানি চাইলে পানি পাওয়া যায় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কৃষকরা। সোনাটিকি হয়ে ফতেপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুরের দিকে গেছে এই শাখাখালটি। ওই এলাকার কৃষকরা শুরুতেই চাতলা বিল, বষিবিল, সিংগুয়া বিলের পানি সেচ দিয়ে ধান চাষ করেছেন। এখন বিল শুকিয়ে যাওয়ায় পানি পাচ্ছেন না। শাখাখালে পানি না থাকায় জমি ফাটতে শুরু করেছে। ধান গাছ শুকাতে শুরু করেছে কোথাও কোথাও। পানি না পেলে পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাবে বলে দাবি স্থানীয় এলাকার কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, ৪৫ দিনের মধ্যে চারা রোপন না করতে পারলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পানি ছাড়ার বিষয়টি আসলে পাউবো’র নিয়ন্ত্রণে। আমরা কৃষকের সমস্যার কথা তাদেরকে জানিয়েছি। তারা বিষয়টি সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন।
মৌলভীবাজার পওর বিভাগ (বাপাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল মুঠোফোনে বলেন, বন্ধ থাকা সুইচ গেইটগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। আমাদের ঠিকাদাররা সেখানে কাজ করছে। তাছাড়া খালগুলো অনেক লম্বা। স্বল্প বাজেটে বড় বড় খালগুলো খনন করা সম্ভব হয়না। সুইচগেইটগুলো খুলে দেয়ার পর উজানের কৃষকরা শুধু নিজেদের স্বার্থ চিন্তা করে আবার সেগুলো বন্ধ করে দেয়। ফলে ভাটির দিকে পানি কম যায়। খালগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পলি মাটি জমেছে। তাই পানির গতিও কমেছে। কৃষকরা এ বিষয়ে সহযোগিতা না করলে ৪-৫ জন লোকবল দিয়ে মনু নদীর ৩০৫টি সুইচগেইটের তদারকি অসম্ভব। তবুও আমাদের তদারকি রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত কৃষকদের এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি