জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে শাহানা হত্যা মামলার চার মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের শিলুয়া চা বাগানের চা শ্রমিক আরমান আলীর মেয়ে শাহানা আক্তার (২৬)কে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার অভিযোগে চার মাস পর প্রেমিক লালনপাশী (২৩) ও ভিকটিমের দুলাভাই উজির মিয়া (৪২) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর হত্যার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। অভিযুক্তদের ৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় শিলুয়া চা বাগানের চা শ্রমিক আরমান আলীর মেয়ে শাহানা আক্তার (২৬) গতবছরের ২৭ অক্টোবর বিকালে বাড়ীতে কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে আর বাড়ী ফিরেনি। মেয়ে নিখোঁজের ঘটনায় তার বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা নানা জায়গায় তাকে খোঁজতে থাকে। পরে নিখোঁজের ৩ দিন পর ২৯ অক্টোবর বিকেলে ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃ সীমান্তবর্তী থাল নদীর পানিতে একটি নারীর লাশ ভেসে থাকতে দেখে লোকজন থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সিরাজুল ইসলাম ওসি মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের নির্দেশনায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিকটিম শাহানার মোবাইলের কল লিস্টের সূত্র ধরে প্রেমিক লালনপাশী ও শাহানার দুলাভাই উজির মিয়া হত্যার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা শাহানা কে ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃসীমান্তবর্তী থাল নদীতে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। নিহত শাহানার ৬ বছর আগে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানের মোঃ সিরাজ মিয়ার সাথে বিয়ে হয়। স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় বিয়ের তিন মাসের মধ্যেই বাবার বাড়িতে ফিরে আসে শাহানা। বাবার বাড়ীতে অবস্থাকালে শাহানার সাথে একই বাগানের হিন্দুধর্মের যুবক লালনপাশীর সাথে গত দুই বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ও মন দেওয়া নেওয়া শুরু হয়। প্রেমের সম্পর্কের একপর্যায়ে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। চলতে থাকে গোপন অভিসার। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি এলাকাবাসী সহ তার দুলাভাই উজির মিয়া জানতে পেরে তাদের প্রতি ক্ষিপ্ত হন। এদিকে শাহানার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে মরিয়া হয়ে ওঠে তার দুলাভাই উজির মিয়া। এক পর্যায়ে শাহানার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে। শারীরিক সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থ হয়ে প্রেমিক লালনপাশীর সহায়তায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রেমিক লালনপাশী ও দুলাভাই উজির মিয়া ঘটনার দিন মোবাইল ফোনে ঠেকে নিয়ে শাহানাকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর কাউকে কিছু না জানানোর জন্য প্রেমিক লালনপাশীকে সতর্ক করে দুলাভাই উজির। হত্যায় বিষয়টি প্রকাশ করলে তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়া হয়।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, এ মামলার তদন্ত কালে ভিকটিম শাহানার মোবাইলের কল লিস্টের সূত্র ধরে তার প্রেমিক লালনপাশী ও ভিকটিমের দুলাভাই উজির মিয়াকে হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে আটক করি। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে লালনপাশী জানায়, শাহানার সাথে তার দুলাভাই উজির মিয়া শারীরিক সম্পর্ক গড়তে চেষ্টা করে। শারীরিক সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থ হয়ে শাহানার প্রেমিকসহ শাহানাকে সমাজচ্যুত করার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে প্রেমিকের সহায়তায় শাহানাকে হত্যার পরিকল্পনা হিসেবে দুই জন মিলে তাকে হত্যা করে। এ মামলায় তাদের দুই জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
জুড়ী থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেন বলেন, এ মামলায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যার সাথে জড়িত শাহানার দুলাভাই ও প্রেমিক লালনপাশীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত থানায় মামলা রুজু করে (মামলা নং-১, তারিখ-০২-০২-২০২৩) আসামীদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ
সাইবার আইনের মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে, গ্রেপ্তাররা মুক্তি পাচ্ছেন
সাবেক এমপি সুজনের জামিন না মঞ্জুর, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ