কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ভেঙে যাওয়া বাঁশের সাঁকোয় হামাগুড়ি দিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পারাপার করছে মানুষ। প্রতিবছর স্থানীয় উদ্যোগে সাঁকোটি মেরামত করা হলেও সরকারিভাবে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ না নেয়ায় বিপাকে রয়েছে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে প্রায়শই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। স্থায়ীভাবে সাঁকো নির্মাণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের শিমুলবাড়ী গ্রামে নবিউলের ঘাটে বারোমাসিয়া নদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি জরাজীর্ণ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। চলতি বছরে বন্যার তীব্র স্রোতে সাঁকোর মাঝামাঝি জায়গায় কয়েকটি খুটি ভেঙে সাঁকোটি বেঁকে হেলে পরেছে। এরই উপর দিয়ে ঝুঁকির মধ্যে চলাচল করছে মানুষ। ভারি বস্তা বা সামগ্রী পারাপার করতে হিমশিম অবস্থা তাদের।
স্কুল-কলেজে যাওয়া শিক্ষার্থীরা সাইকেলকে লাঠি হিসেবে ব্যবহার করে সতর্কভাবে পারাপার করছে। ধান কাটার মৌসুমে বিপাকে পরে চাষিরা। এসময় নৌকা সংগ্রহ করে ধান,পাট,ভুট্টাসহ শাক-সবজি অতিরিক্ত পয়সা গুণে পার করতে হয়।
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম জেলায় সরকারিভাবে ১৬টি নদ-নদীর কথা উল্লেখ থাকলেও বারোমাসিয়া নামে কোন নদীর কথা উল্লেখ নেই। স্থানীয় সংবাদকর্মী অনীল চন্দ্র সরকার জানান, বারোমাসিয়া বা বাণিদহ নদীটি ধরলা নদীর একটি উপশাখা নদী। যা সরাসরি ভারত থেকে প্রবেশ করে কুড়িগ্রামে মূল ধরলা নদীতে মিশে গেছে। ধরলা নদী এবং বারোমাসিয়া নদীর পানির রঙ সম্পূর্ণ আলাদা। ফলে বারোমাসিয়া নদীটি আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করছে। নদীটি ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানার সীমান্তবর্তী মরাকুটি গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোড়কমন্ডপ গ্রাম দিয়ে। স্থানীয়ভাবে এটিকে বাণিদহ বা বারোমাসিয়া নদী বলা হয়ে থাকে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। এই উপশাখা নদীর উপর দুটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। একটি গতমাসে নির্মাণ করা হলেও নবীউলের ঘাটের সাঁকোটি বন্যায় ভেঙ্গে পরায় শোচনীয় অবস্থা হয়েছে।
সাঁকো পারাপার করার সময় সাঁকোর ওপারের ঝাউকুটি গ্রামের স্কুল শিক্ষার্থী মমিনুল (১৪) ও আজমেরী (১৩) জানায়, তারা প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে সাঁকোটি পার হয়। ভাঙা জায়গাটি পার হতে গিয়ে মনে হয় এই বুঝি সাঁকোটি ভেঙ্গে পরে যাবে।
মাথায় ধানের বস্তা নিয়ে পার হতে গিয়ে শাহাদত (৪৫) নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভারি জিনিস নিয়া বাঁশের হাঙ্গরাত যাওয়া আমার খুব কষ্ট হয়। একনা সাইকেল পার করা, ভার ধরি যাওয়া খুব কষ্ট হয়।’
এই গ্রামের কৃষক হামিদ মিয়া জানান, ‘ছয় বছর আগে এখানে একটা ঘাট ছিল। তখন আমরা নৌকা দিয়ে পারাপার করছি। তারপরে জনগণের কাছে বাঁশ কালেকশন করি আমরা একটা বাঁশের সাঁকো দিছি। এবার সাঁকোটি ভেঙে গেছে। এখন পারাপারে খুবই সমস্যা।’
বালাহাট স্কুল এন্ড কলেজের সহকারি শিক্ষক ও মৎস ব্যবসায়ী আতাউর রহমান রতন জানান, স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ এই এলাকার উৎপাদিত পণ্য এই ব্রীজের ওপর খুব ঝুঁকি নিয়ে পার করতে হয়। সাঁকোটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ ফুট। প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ পারাপার করে। প্রতিবছর আমরা নিজেদের উদ্যোগ সাঁকোটি পারাপারের উপযোগী করি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারিভাবে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমরা এখানে একটি স্থায়ী সেতু চাই।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস বলেন, ইতোমধ্যে জনদুর্ভোগ কমাতে দুটি জরাজীর্ণ সেতু আমরা ঠিক করার উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়াও এরকম কোন বিষয় আমাদের নজরে আসলে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করি। যাতে জনদুর্ভোগ কমিয়ে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি