বয়সের বাঁধা পেরিয়ে আর মানুষের টীকাটিপ্পনী এড়িয়ে শিক্ষা জীবনে এগিয়ে যাচ্ছেন অদম্য বেলায়েত হোসেন। এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে ৫৫ বছর বয়সে তিনি এখন ভর্তি হতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে লেখাপড়া করে স্থানীয় পর্যায়ের সাংবাদিকতা থেকে নিজেকে আরও মেলে ধরতে চান।
চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি।
আগামী ২৯ জুন ভর্তি পরীক্ষার যুদ্ধে অংশ নিতে তিনি রীতিমতো ভর্তির কোচিং ক্লাস করছেন।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পশ্চিম খন্ড এলাকার বেলায়েত হোসেন এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রথমবার প্রস্তুতি নেন ১৯৮৩ সালে। অর্থাভাবে সেবার প্রস্তুতি নিয়েও ফরম ফিলাপ করতে পারেননি। পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি আবারও এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু সে বছর সারাদেশে বন্যার কারণে তার পরীক্ষা দেয়া হয়ে ওঠেনি। এরপর তিনি ফটোগ্রাফার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি সংবাদপত্রের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে দৈনিক করতোয়া পত্রিকার গাজীপুরের শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।
দুই ছেলে এক মেয়ের জনক বেলায়েত কর্মজীবন শুরু করেও লেখাপড়ায় হাল ছাড়েননি। ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়ায় তেমন একটা এগিয়ে যেতে আগ্রহী নন। ছেলেমেয়েরা তার স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হলে নিজেকে নিয়েই আবার শিক্ষা জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। অবশেষে নিজেই আবার লেখাপড়া শুরু করেন। এরপর ২০১৯ সালে একটি মাদরাসা থেকে এসএসসি এবং ২০২১ সালে কারিগরি বোর্ড থেকে তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
যে বছরে তিনি এইচএসসি পাশ করেছেন একই বছর তার ছোট ছেলে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার ইচ্ছে শিক্ষাজীবনে আরও বহুদূর এগিয়ে যাওয়া। লেখাপড়া করে এই দুটি ধাপ পেরোনোর পথ তার কাছে খুব একটা মসৃণ ছিল না।
তিনি জানান, লেখাপড়ার এই পথে তার নিজের আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামের লোকজন বিষয়টিকে ভালো চোখে নেয়নি। উপহাস তিরস্কার প্রায়ই ঝুটতো তার কপালে। তবুও থেমে যাননি তিনি। পিছুটান দেননি। মায়ের দোয়া নিয়ে সামনের পথে গিয়েছেন তিনি।
শিক্ষাক্ষেত্রেও সহপাঠীরা তাকে আংকেল বলে সম্বোধন করতো। আর তিনি সহপাঠী তরুণ-তরুণীদের আম্মু আর আব্বু বলে ডাকতেন। এভাবেই শিক্ষাঙ্গনে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন সবার সঙ্গে।
অদম্য বেলায়েতের এখন ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়বেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে কারো কারো কাছে পরামর্শ চাইতে গিয়েও টীকাটিপ্পনী-মুচকি হাসির মুখে পড়েছেন তিনি। অবশেষে তিনি স্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারে গিয়ে ওই সেন্টারের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের ভর্তির আবেদন করেন। শুরু করেন ভর্তির জন্য লেখাপড়া। তার ইচ্ছা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হয়ে জীবনকে নতুন পথে নিয়ে যাবেন। তার সংসারের সবাই আশা করছেন, লেখাপড়ায় বেলায়েত নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবেন।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম