April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, October 8th, 2021, 9:14 pm

৫ মাস পর শিমুলিয়া-বাংলাবাজারে চলছে স্পিডবোট, স্বস্তিতে যাত্রীরা

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পদ্মায় স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে স্পিডবোট চলাচল ফের শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শিমুলিয়ার ঘাট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি দেয় বিআইডব্লিউটিএ। শুক্রবার (৮ অক্টোবর) সকাল থেকে পুরোদমে এই রুটে স্পিডবোট চলছে। এই উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার বিকালে শিমুলিয়া ঘাটে দোয়া মাহফিল হয় এবং বাংলাবাজার ঘাটে দোয়া হয় বাদ আসর। স্পিডবোট চালু হওয়ায় এই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। গত ৩ মে শিমুলিয়া ঘাট থেকে ৩১ জন যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ফেরিঘাটের দিকে যাচ্ছিল একটি স্পিডবোট। পুরোনো কাঁঠালবাড়ি ঘাটের কাছাকাছি আসার পর সেখানে নোঙর করে রাখা বালুবোঝাই বাল্ক হেডের সঙ্গে সংঘর্ষে স্পিডবোটটি ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনায় মারা যান ২৬ জন। এ ঘটনার পর থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। অনিবন্ধিত স্পিডবোট, চালকদের লাইসেন্স ও ডোপ টেস্ট ছাড়া এ নৌপথে স্পিডবোট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, এই নৌপথে চলাচলকারী অনিবন্ধিত স্পিডবোটের নিবন্ধন, চালকদের যোগ্যতা সনদ ও রুট পারমিট দেওয়ার পর স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ শিমুলিয়া ঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক পরিচালক এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, এ পর্যন্ত ১০১টি স্পিডবোট রুট পারমিট ও টাইমটেবিল পেয়েছে। এর মধ্যে শিমুলিয়া ঘাটের ৫৩টি, মাঝিরকান্দি ঘাটের ১৯টি এবং বাংলাবাজার ঘাট এলাকার মালিকানাধীন ২৯টি স্পিডবোট বৈধভাবে চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এই ১০১টি স্পিডবোট শিমুলিয়া থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার এবং শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ঘাটে চলাচল শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনিবন্ধিত স্পিডবোটের নিবন্ধন, চালকের যোগ্যতা সনদ ও রুট পারমিট প্রক্রিয়ার পর স্পিডবোট সচলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বিআইডাব্লিউটিএ। এই বৈধ প্রক্রিয়ায় সরকারের রাজস্ব আয় ছাড়াও সাধারণের চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দক্ষতা নিশ্চিতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চালকরা সনদপত্র গ্রহণ করেছেন। আর মাদকাসক্ত কাউকে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হয়নি। তিনি আরও জানান, ডোপ টেস্টে নয় জন চালক মাদকাসক্ত প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে ছোট-মাঝারি-বড় ৪০ সিসি থেকে ২০০ সিসি পাওয়ারের চার রকমের স্পিডবোট থাকলেও সকল স্পিডবোটই এখন ১২ জন করে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। লাইফ জ্যাকেট ব্যবহারও বাধ্যতামূলক। স্পিডবোটগুলো চলবে দিনের বেলায়। বিআইডব্লিউটিএ অফিস থেকে জানা গেছে, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার এবং শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি নৌরুটে স্পিডবোটের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ১৪৫টির আবেদন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে কাগজপত্র ঠিক থাকায় নিবন্ধন পেয়েছে ১২৬টি। পাশাপাশি ১২০ চালক পেয়েছেন যোগ্যতা সনদ। বিআইডব্লিউটিএ এসব স্পিডবোটকে বৈধতা দিতে চালকদের প্রশিক্ষণসহ সার্ভে সদন (স্পিডবোটের ফিটনেস) ও রুট পারমিট দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ-এর উপ-পরিচালক ওবায়দুল করিম খান বলেন, সাড়ে ১৭ ফুট থেকে ২৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা পাঁচ ধরনের ৪০, ৭৫, ৮৫, ১১৫, ১৫০ ও ২০০ সিসি ইঞ্জিন ক্ষমতার স্পিডবোটকে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শুধু দিনের বেলায় প্রতিটি স্পিডবোট ১২ জন যাত্রী বহন করে চলতে পারবে। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ১৫০ টাকা। আগে বড় স্পিডবোটে ৩২ থেকে ৩৫ জন যাত্রী পারাপার করা হতো। ভাড়া আদায় করা হতো ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ সম্পর্কে বাংলাবাজার ঘাটের দায়িত্বরত নৌপুলিশের পরিদর্শক আবদুল রাজ্জাক বলেন, গত ৫ মাস ধরে তারা স্পিডবোটের লাইসেন্সই শুধু দিয়েছে। চালকদের সেভাবে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়নি। আমরা চালকদের প্রশিক্ষণ নিতেও দেখিনি। তাই বেপরোয়া এসব স্পিডবোট চালকদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। তবে স্পিডবোট চালক ও মালিকদের আগের নিয়ম সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে বলে দাবি করেছেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মাওয়া ঘাটের পরিদর্শক মো. জরিহুল কাইয়ুম বলেন, “গত অগাস্ট মাসের ১৯ তারিখে একটি ক্যাম্প হয়। সেখানে ১৩৪ জন এক দিনের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের প্রশিক্ষণ দেয় নৌবিভাগের তিন জন প্রশিক্ষক। একই সঙ্গে চালকদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১১৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে, তাদের যোগ্যতা সনদ দেওয়া হয়েছে। স্পিডবোট ঘাটে কোনো প্রকার অনিয়ম ও সিন্ডিকেট আর চলতে দেওয়া হবে না। এদিকে, স্পিডবোট চালু হওয়ায় খুশি এই নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রীরা।