খুলনা জেলার পাইকগাছায় পাঁচ মেয়েসহ নিজ স্ত্রীকে সম্পতি থেকে বঞ্চিত করে ছেলের নামে সব সম্পত্তি লিখে দেওয়ায় মৃত্যুর পর বাবার লাশ দাফন আটকে দেয় মেয়েরা। উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের ঘোষাল গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
এদিকে পিতার মৃত্যুর পর সম্পতি লিখে দেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে লাশ বাড়ির উঠানে ফেলে রেখেই স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে যায় ছেলে। সর্বশেষ পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) হস্তক্ষেপে লাশটি দাফন করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার গদাইপুরের ঘোষাল এলাকার মৃত কাওসার গাজীর ছেলে শওকত গাজী কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে গত মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ভোর রাতে খুলনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
পরে ওইদিন সকাল ৮টায় তার লাশটি বাড়িতে নেওয়া হয়। মৃত্যুর আগে তিনি শরিক হিসেবে ৫মেয়ে, ১ছেলেসহ স্ত্রীকে রেখে যান। তবে তিনি অসুস্থ হলে তার ছেলে মামুন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সকলের হক বঞ্চিত করে সব সম্পত্তি পিতার কাছ থেকে কৌশলে লিখে নেন। দাফনের জন্য লাশ গোসল করাতে নিলে শওকত গাজীর হাতের আঙ্গুলে কালির ছাপ দেখা যায়। তারপর সম্পত্তি লিখে নেওয়ার ঘটনা আঁচ করতে পেরে মৃতের ৫মেয়ে পিতার লাশ দাফনে বাধা দেয়।
আর শরীকদের হক ফাঁকি দেওয়ায় স্থানীয়রাও তার জানাজাসহ লাশ দাফন করবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে মঙ্গলবার থেকে দু’দিন লাশটি বাড়ির উঠানেই পড়েছিল।
এদিকে ঘটনার জানাজানি হলে বাড়িতে পুলিশ উপস্থিত হলে বুধবার সন্ধ্যায় মামুন পিতার লাশ ফেলে রেখেই বাড়ি থেকে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে থানার ওসির হস্তক্ষেপে লাশ দাফন করা হয়।
এ ব্যাপারে মৃত শওকত গাজীর মেয়ে লাবনী আক্তারসহ ভুক্তভোগী সকলেই বলেন, পিতার অসুস্থতার সুযোগে চিকিৎসার নামে তাদের ভাই মামুন কাউকে কিছু না জানিয়ে সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছে। যার ফলে পিতার লাশ দাফনে তারা বাধা দেন।
স্থানীয় ঘোষাল জামে মসজিদের ইমাম বেলাল হোসেন বলেন, শওকত গাজীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে মঙ্গলবার বাদ জোহর জানাজার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে মৃতের ৫ মেয়ে এসে তাদের জমির হক বঞ্চিত করায় জানাজা এবং লাশ দাফনে বাধা দেয়। ফলে মুসল্লিসহ গ্রামবাসী জানাজা নামাজ না পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মেয়েদের সম্পত্তির হক বঞ্চিত করায় তারা পিতার লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে হক বঞ্চিত মেয়েরাসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ। মেয়েরা চাইলে তাদেরকে সার্বিক আইনি সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারা।
পরে থানা পুলিশ, ইমাম বেলাল হোসেন, মাওলানা আহমদ আলীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার মৃতের জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি