নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) জন্য ২০০৪ সালে কেনা হয় ৫০টি দ্বিতল সুইডিশ ভলভো বাস। বাসগুলো কেনায় মোট ব্যয় হয় ৫২ কোটি টাকা। অথচ অযতœ-অবহেলায় অচিরেই নষ্ট হওয়া বিলাসবহুল বাসগুলো শেষ পর্যন্ত বিক্রি হলো মাত্র ৫০ লাখ টাকায়। মূলত যন্ত্রাংশের অভাবেই অর্থনৈতিক আয়ুষ্কালের আগেই বিকল হয় বাসগুলো। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন করে এবার বড় পরিসরে কোরিয়ান এসি বাস কেনার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বিআরটিসি। আগের প্রকল্পগুলোতে ১০ শতাংশ যন্ত্রাংশের সংস্থান থাকলেও এবার রাখা হয়েছে ৩০ শতাংশ। এতে বাসগুলো দীর্ঘদিন মানুষের সেবা দিতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মাধ্যমে প্রস্তাবিত ‘প্রকিওরমেন্ট অব সিএনজি সিঙ্গেল ডেকার এসি বাস ফর বিআরটিসি’ প্রকল্পের আওতায় সিএনজিচালিত বাসগুলো কেনা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের ঋণে ৩২০টি এসি বাস কেনা হবে। সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে বাসগুলোতে। আমরা এরইমধ্যে প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাবনা কমিশনে পাঠিয়েছি। এটা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সুইডিশ ভলভো বাসের মতো বাসগুলোর অবস্থা দ্রুত সময়ে বেহাল হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগের প্রকল্পগুলোতে ১০ শতাংশ যন্ত্রাংশের সংস্থান ছিল। তবে নতুন প্রকল্পে ৩০ শতাংশ যন্ত্রাংশের সংস্থান রাখা হয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকেই এ সিদ্ধান্ত। পার্টসের ব্যবস্থা বেশি রাখছি যাতে বাসগুলো ২০ থেকে ২২ বছর সেবা দিতে পারে। বিআরটিসির প্রস্তাবিত প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। তবে কোরিয়ান বাসগুলো দীর্ঘদিন যাতে মানুষকে সেবা দিতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, তারাও (বিআরটিসি) সরকার আমরাও সরকার। মানুষ যাতে সঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারে সেজন্য প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে বাস কেনার বিষয়ে অনেক অভিযোগ শুনতে পাই। কিছুদিন না যেতেই বাসগুলো ভেঙে পড়ে, নষ্ট হয়। জনগণের টাকায় কেনা বাসগুলো যাতে দীর্ঘদিন সেবা দিতে পারে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য কোরিয়ায় প্রস্তাব পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার ও কোরিয়ান সরকারের মধ্যে বিষয়টি আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ইআরডি থেকে প্রস্তাব কোরিয়ান সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন অর্থায়নের বিষয়টি আলোচনা পর্যায়ে আছে। জানা যায়, প্রকল্পটির প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ৬শ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১৬৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও বৈদেশিক ঋণ ৪৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) কোরিয়ান বৈদেশিক ঋণের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃশহরের মধ্যে নির্ভরযোগ্য এবং আরামদায়ক পাবলিক পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা, দূষণমুক্ত বাস পরিচালনা ও দুর্বল বাসগুলি স্থানান্তর করা। প্রকল্পটি গ্রহণের যৌক্তিকতা দেখিয়ে বিআরটিসি জানায়, ঢাকা মহানগরীতে উন্নত ও সমন্বিত পরিবহন নেটওয়ার্ক সিস্টেম প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিআরটিসি বিভিন্ন সময় ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। যাত্রীদের কাছে বিআরটিসি বাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বাসস্বল্পতার কারণে বিআরটিসির পক্ষে যাত্রীদের এ চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।এ পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) মাধ্যমে ইডিসিএফ-এর ঋণ সহায়তায় ৩২০টি সিএনজিচালিত একতলা এসি বাস কেনার পিডিপিপি (প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিআরটিসির আওতায় গুণগত মানসম্পন্ন গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়বে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি