প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামে সব অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব।
তিনি বলেন, আমার মা ৭ জুন হরতাল (ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচির সমর্থনে ১৯৬৬ সালে দেশব্যাপী হরতাল) সফলতার পিছনে অবদান রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে কিভাবে আন্দোলন করতে হয় এবং সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হয় তা তিনি জানতেন।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বঙ্গমাতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব পদক-২০২৩ প্রদানের জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টে তাদের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসায় বঙ্গমাতা তার স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে গুলি করে গণহারে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন জেলে ছিলেন, তখন বঙ্গমাতা তার রাজনীতি ও তার সংগঠনের (আওয়ামী লীগের) অবস্থা সম্পর্কে তাকে জানাতেন। তিনি দলের নেতা-কর্মীদের কাছে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনাও পৌঁছে দিতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাড়ি সবসময় পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের নজরদারিতে ছিল। আমার মা নেতাদের সঙ্গে কথা বলতেন এবং গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে তাদের (বঙ্গবন্ধুর) নির্দেশ দিতেন।
যখন কিছু নেতা সেই সময়ে আট দফা দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন, তখন ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবির পক্ষে তার মায়ের দৃঢ় অবস্থানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে আটকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব গ্রহণ না করে তার মা মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে সকল আসামির মুক্তির জন্য দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। আমার মায়ের কি দৃঢ় মনোবল ছিল!
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি গোয়েন্দারা বঙ্গমাতাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এবং তাকে মামলায় জড়ানোর চেষ্টাও করেছেন। স্বাধীনতা এবং সমস্ত অর্জনে আমার মায়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল ’
তার বাবা আজীবন সংগ্রাম করেছেন এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।তিনিও যাতে মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন সেজন্য সকলের কাছে দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমার মা ও বাবার কাছ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি তার ভিত্তিতে আমি মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য চারজন বিশিষ্ট নারী ও জাতীয় মহিলা ফুটবল দলকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব পদক-২০২৩ প্রদান করেন।
ওই চার নারী হলেন- রাজনীতিতে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (মরণোত্তর), শিক্ষায় অনিমা মুক্তি গোমেস, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ায় নাসিমা জামান ববি এবং গবেষণায় ড. সেঁজুতি সাহা।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা সারাদেশে অসচ্ছল নারীদের সেলাই মেশিন বিতরণ ও আর্থিক অনুদানের উদ্বোধন করেন।
বঙ্গমাতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আর্থিক মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার নারী অনুদান গ্রহণ করছেন।
সংগ্রামে স্বাধীনতা, প্রেরণায় বঙ্গমাতা (সংগ্রাম থেকে মুক্তি, বঙ্গমাতা অনুপ্রেরণার উৎস) প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।
বঙ্গমাতার গৌরবময় জীবনের ওপর আলোকপাত করে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মের ওপর আলোকপাত করে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান বেগম চেমন আরা তৈয়ব। এছাড়া বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২