November 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, August 18th, 2022, 9:25 pm

৬ ব্যাংকের এমডিকে শোকজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির ‘প্রমাণ পাওয়ায়’ ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দেওয়ার পর এবার ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (১৮ আগষ্ট) বলেন, ওই ছয় ব্যাংকে গত বুধবারই তারা নোটিস পাঠিয়েছেন। ডলারে অতিরিক্ত মুনাফা করার সঙ্গে কোন কোন ব্যাক্তি জড়িত তা প্রাথমিকভাবে ব্যাংকই বের করবে। এজন্য পাঁচটি দেশি এবং একটি বহুজাতিক ব্যাংকের এমডির কাছে এ বিষয়ে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই ছয় ব্যাংকের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি, তবে ট্রেজারি প্রধানদের নির্দেশ দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে নামগুলো জানতে পেরেছে। তারা বলেছেন, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের ‘ট্রেজারি অপারেশনে’ অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রমাণ বাংলাদেশ ব্যাংক পেয়েছে। এমডিদের কৈফিয়ত তলবের বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে কোনো ব্যাংকই সাড়া দেয়নি। ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তায় শুধু বলেছেন, ‘নো কমেন্টস’। আর বহুজাতিক ব্যাংক স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয় এক এসএমএসের মাধ্যমে বলেছেন, ব্যাংকের নীতি অনুযায়ী, ‘তদন্তাধীন বিষয়ে’ কোনো মন্তব্য তিনি করবেন না। বাকি চার ব্যাংকের এমডিদের কেউ ফোন ধরেননি। এসএমএস পাঠালেও সাড়া দেননি। এর আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময়ও ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পায়নি। ব্যাংকগুলোর বিদেশি মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয়, রেমিটেন্স, বিদেশি মুদ্রায় আমানত সংগ্রহ এবং বিভিন্ন ধরনের বন্ডে বিনিয়োগ। আবার বিদেশি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে কোনো কোনো ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোন ব্যাংক কী পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করতে পারবে, তার একটি সীমা (এনওপি-নেট ওপেন পজিশন) নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। আগে ব্যাংকের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করার সুযোগ ছিল। ডলার বাজারের অস্থিরতা কমাতে গত ১৫ জুলাই তা কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সীমার বেশি ডলার হাতে থাকলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকের কাছে বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ব্যাংকগুলোর। রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার মধ্যে গত বছরের শেষ দিক থেকে ডলারের দাম বাড়ছিল। এ বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে খোলা বাজারে ডলারের বিনিময় হার প্রথমবারের মত ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দফায় দফায় বাজারে ডলার ছাড়ার পাশাপাশি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় সেসময় পরিস্থিতি কিছুটা সামলে উঠতে পারলেও জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আবার এই আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিনিময় হার ১০০ টাকা ছাড়ায়। ১১ অগাস্ট তা ১২১ টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। ডলারের দরে এই সংকটের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, এর পেছনে কিছু কারসাজি চিহ্নিত করেছে সরকার। ওই সময়ই মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে অভিযান শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেউ যাতে দাম বাড়ানোর জন্য ডলার মজুদ না করে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। গত সপ্তাহ পর্যন্ত ১৩৫টি মানি চেঞ্জারে অভিযান চালিয়ে ৪২টিতে অনিয়ম পাওয়ায় কারণ দর্শানোর (শো কজ) নোটিস দেওয়া হয়। এ ছাড়া পাঁচটি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিতের কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এখন ডলারের কিছুটা কমে এসেছে। গত বুধবার খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৩ টাকায়। আর আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলার ৯৫ টাকায় বিনিময় হয়েছে।