অনলাইন ডেস্ক :
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙ্গামাটি সব সময় পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। গত মঙ্গলবার পার্বত্য জেলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চট্টগ্রামের সীতাকু- থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছয়জন শিক্ষার্থীসহ আটজনের একটি দল সকালে রাঙ্গামাটি ভ্রমণে যায়। প্রথমে তারা রাঙ্গামাটি সদর থেকে নৌকা ভাড়া করে শুভলং ঝর্ণার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। শুভলং ঝর্ণার দেখে দুপুর ১২টায় রাঙামাটি সদরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা। কিন্তু পথে ঘটে বিপত্তি, কাপ্তাই লেকের বিশাল কচুরিপানার একটি ঝাঁক পর্যটকদের নৌকাটিকে ঘিরে ফেলে। শত চেষ্টা করেও নৌকার মাঝি কচুরিপানার ঝাঁক অতিক্রম করতে পারেননি। মাঝির প্রাণপণ চেষ্টার একপর্যায়ে নৌকার প্রপেলারের পাখা ভেঙে যায়। এরপর মাঝি ও আটকেপড়া পর্যটকরা দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কচুরিপানা পরিষ্কার করে নিজেদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন তারা। দীর্ঘ ভ্রমণ করে রাঙ্গামাটিতে এসে সারাদিন কিছু না খাওয়ার ফলে সবারই ক্লান্তি চলে আসে এবং সবাই শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়। এসময়ে পাশ দিয়ে নৌকা নিয়ে যাওয়া মানুষজনের কাছে খাবারের জন্য অনুরোধ জানায় পর্যটক দল। কিন্তু কেউ তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে দেখে পর্যটকদের মনে ভয় ও শঙ্কা জাগতে শুরু করে। তারা এ অবস্থা থেকে কীভাবে উদ্ধার পেতে পারেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কোনো উপায় না দেখে বিকেল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ পুলিশের জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দেন রিয়াদ জিলানী নামে পর্যটকদের একজন। বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ৯৯৯-এর পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ৯৯৯ তাৎক্ষণিকভাবে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ও রাঙ্গামাটির বরকল থানায় বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। সংবাদ পেয়ে বরকল থানার জারুলছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আশিকসহ একটি দল উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়ে। উদ্ধারকারী পুলিশ দল ঝুঁকিকে তুচ্ছ করে কাপ্তাই লেকে সাঁতার কেটে কচুরিপানার ঝাঁকের কাছে পৌঁছায়। কারণ সেখানে নৌকা নিয়ে যাওয়ার উপায় ছিল না। কচুরিপানার কাছাকাছি গিয়ে দা, শাবল দিয়ে কচুরিপানা কাটতে কাটতে সামনের দিকে এগোতে থাকে উদ্ধারকারী দল। দীর্ঘ এক ঘণ্টা কচুরিপানা পরিষ্কার করে পর্যটক দলের কাছে পৌঁছায় পুলিশ সদস্যরা। বিপদগ্রস্ত ক্ষুধার্ত পর্যটকদের উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যরা তাদের খাবার ও পানীয় দিয়ে পর্যটকদের ক্ষুধা নিবারণ করেন। পর্যটকরা উদ্ধারকারী পুলিশ দলকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। উদ্ধারকারী পুলিশ দলের ইঞ্জিনের নৌকাযোগে পর্যটক দলকে রাত ৯টায় রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের পরিচালনাধীন পলওয়েল পার্কে নিয়ে আসা হয়। উদ্ধার পর্যটকরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ও রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, চারদিকে যখন ঘোর অন্ধকার দেখছিলাম, তখনই আলোর পথ দেখিয়ে আমাদের উদ্ধার করলো বাংলাদেশ পুলিশ। তাই ৯৯৯ আর রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি