অনলাইন ডেস্ক :
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ভারতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাকে গ্রেফতার করে।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নয়াদিল্লির রাজনীতিতে এমন ঘটনা ঘটল। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়াল গ্রেফতার হলেন।
আবগারি দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান কেজরিওয়ালকে ৯ বার সমন পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু তিনি হাজিরা দেননি। এরপরই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ তার বাড়িতে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে ইডি।
এ সময় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। আশপাশে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। প্রায় দুই ঘণ্টা পর কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করে দিল্লিতে ইডির কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, দিল্লিতে কেজরিওয়ালের এএপি সরকার আবগারি নীতি বদলে দিয়ে কয়েকটি কোম্পানিকে বেআইনিভাবে ব্যবসায়িক সুযোগ পাইয়ে দিয়েছে।
এই আবগারি নীতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে দিল্লির এএপি সরকার গত বছর তা বাতিল করে। কিন্তু তার আগেই এ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন দিল্লির গভর্নর ভিকে সাক্সেনা।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ইডি এক প্রেসনোটে মদ নীতি কেলেঙ্কারি মামলায় কেজরিওয়ালকে ‘ষড়যন্ত্রকারী’ বলে অভিহিত করেছে।
বর্তমানে বাতিল করা মদ নীতি গঠন করার সময় কেজরিওয়ালসহ এএপির নেতা, তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া ও সাংসদ সঞ্জয় সিংহ সঙ্গে ষড়যন্ত্রে ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) নেত্রী কে কবিতা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ইডির।
এই কথিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এমন একটি নীতি তৈরি করা হয় যা ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের একটি মদের লবিকে সুবিধা পাইয়ে দেবে, যাকে ইডি ‘দক্ষিণ লবি’ বলে অভিহিত করেছে।
ইডির ভাষ্য অনুযায়ী, এর বিনিময়ে ‘দক্ষিণ লবি’ এএপিকে ১০০ কোটি রুপি দেবে।
কিছু অভিযুক্ত ও স্বাক্ষীর জবানে কেজরিওয়ালের নাম উঠে আসে বলে তাদের বিভিন্ন রিমান্ড নোট ও চার্জশিটে ইডি উল্লেখ করেছে।
তদন্তকারী সংস্থাটি বলেছে, মদ নীতি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত বিজয় নায়ার ঘন ঘন কেজরিওয়ালের দপ্তরে যেতেন আর সেখানেই অধিকাংশ সময় কাটাতেন। নায়ার মদ ব্যবসায়ীদের জানিয়েছিলেন, তিনি কেজরিওয়ালের সঙ্গে ওই নীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তদন্তকারীদের দাবি, এই নায়ারই ভারতের শীর্ষ স্থানীয় মদ কোম্পানি ইন্দোস্পিরিট প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক সমীর মহেন্দ্রুকে কেজরিওয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের বৈঠক ব্যর্থ হয়, তখন নায়ার মহেন্দ্রু ও কেজরিওয়ালের মধ্যে ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন। এই কথোপকথনের সময় কেজরিওয়াল বলেন, নায়ার তার ‘সন্তান’ এবং তাকে তিনি বিশ্বাস করেন।
এই মামলায় ‘দক্ষিণ লবি’র প্রথম অভিযুক্ত ছিলেন রাঘব মাগুন্ত। এখন তিনি সাক্ষীতে পরিণত হয়েছেন। এই মাগুন্ত জানান, তার বাবা ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির একজন এমপি, তিনি মদ নীতির বিষয়ে আরও জানার জন্য কেজরিওয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে দেওয়া এক স্বীকারোক্তিতে সিসোদিয়ার সাবেক সচিব সি অরবিন্দ জানান, আগের বছরের মার্চে তিনি সোসিদিয়ার কাছ থেকে মন্ত্রীদের একটি খসড়া প্রতিবেদন পেয়েছিলেন।
এরপর সোসিদিয়ার ডাক পেয়ে তিনি কেজরিওয়ালের বাড়িতে যান, সেখানে তিনি ওই খসড়া প্রতিবেদন ও সত্যেন্দ্র জৈনকে দেখতে পান। অরবিন্দ অভিযোগ করে বলেন, মন্ত্রীদের কোনো বৈঠকে (জিওএম) এমন কোনো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে দেখেননি তিনি, কিন্তু তাকে ওই নথির ভিত্তিতে জিওএম প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছিল আর এটি তাকে বিস্মিত করেছিল।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২