নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃহৎ আকারে গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করতে যাচ্ছে। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে দ্বিমাত্রিক (টুডি) ও ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) সিসমিক সার্ভে পরিচালনার জন্য ৪শ’ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ওই দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাপেক্স দক্ষিণের অন্তত ১০টি জেলায় ৩ হাজার ২২০ কিলোমিটার লাইন গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের (জিডিএফ) অর্থায়নে ওই কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বাপেক্স নিজস্ব লোকবল দিয়ে ওই কাজ করা হবে। পাশাপাশি সিসমিক সার্ভে করার জন্য নিজস্ব লোকবলের পাশাপাশি সংস্থাটি বিদেশ থেকে দক্ষ প্রকৌশলী এনেও কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সিলেটের জকিগঞ্জে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার এবং তারও আগে দ্বীপ জেলা ভোলায় গ্যাস পাওয়ার পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগী হয়ে উঠেছে বাপেক্স। বিশেষত নোয়াখালী, বরিশাল, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, গোপালগঞ্জ ও ভোলা জেলার অন্তত ৪-৫টি উপজেলায় সংস্থাটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাত্রায় জরিপ পরিচালনা করবে। তার মধ্যে তৃতীয় মাত্রায় জরিপ পরিচালনার জন্য ২৩৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ভোলা জেলার লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন ও নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরে গ্যাস অনুসন্ধান করা হবে এবং ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার লাইনজুড়ে জরিপ করা হবে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে। জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে সেখানে অনুসন্ধান কূপ খনন করবে বাপেক্স।
সূত্র জানায়, বাপেক্সের পক্ষ থেকে ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশালের কিছু অংশেও দ্বিমাত্রিক জরিপ করা হবে। সেজন্য বাপেক্স ১৫৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। ইতিমধ্যে শরীয়তপুরে অনুসন্ধান কূপ খনন করার জন্য লোকেশন নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সংস্থাটি সেখানে কার্যক্রমও শুরু করেছে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে সেখানে কূপ খননের কাজ শুরু হবে। তার আগে শরীয়তপুর জেলায় গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে বাপেক্স সেখানে দ্বিমাত্রিক জরিপ চালায়। জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে সেখানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সেখানে কূপ খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পে ৯৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বাপেক্স ওই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায়।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ১৯৮৯ সালে বাপেক্স গঠনের পর এখন পর্যন্ত ৯টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। সেগুলোর মধ্যে ৭টি থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশে মোট ১৭টি উন্নয়ন কূপের মধ্যে সংস্থাটির মালিকানাধীন কূপ রয়েছে ১১টি আর ওয়ার্কওভার কূপ রয়েছে ৭টি। গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্স এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৯৬ কিলোমিটার লাইন ভূতাত্ত্বিক জরিপ করেছে। আর ১২ হাজার ৭২৩ কিলোমিটার লাইন দ্বিমাত্রিক সিসমিক সার্ভে করেছে। তাছাড়া বাপেক্স ৪ হাজার ৭০ বর্গকিলোমিটার ত্রিমাত্রিক জরিপ করেছে। বর্তমানে প্রতিদিন বাপেক্সের ৮টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে ১৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। সম্প্রতি বাপেক্স যে গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার করেছে, সেটি দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র। জ¦ালানি বিভাগ জানিয়েছে, ওই গ্যাসক্ষেত্র থেকে ৪৮ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা যাবে এবং ওই গ্যাসের আর্থিক মূল্য ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ভূভাগে বাপেক্সকে দিয়েই সফলভাবে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। এখানে বিদেশী কোম্পানির প্রয়োজন নেই। তবু সরকার বিদেশী কোম্পানি দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করছে। অথচ দেশের স্থলভাগে কূপ অনুসন্ধানের জন্য বাপেক্সের নিজস্ব সক্ষমতা রয়েছে। স্থলভাগে অন্য জায়গাগুলোতে বাপেক্স প্রতি বছর অন্তত ৩টি করে অনুসন্ধান কাজ চালাতে পারে। ওই দক্ষতা সংস্থাটির আছে। কিন্তু তাদের দিয়ে নিয়মিত ভিত্তিতে তা করানো হয় না
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী জানান, গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্স সারা দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ওই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে টুডি ও থ্রিডি সিসমিক সার্ভের কাজ শুরু করা হচ্ছে। বাপেক্সের বোর্ড সভায় এ-সম্পর্কিত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ২২০ কিলোমিটার লাইন গ্যাসের অনুসন্ধান করা হবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ