November 2, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, December 15th, 2023, 8:19 pm

মুরগি-ডিমের দাম বেড়েছে, সবজি-মাছ অপরিবর্তিত

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সপ্তাহ ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনার ব্রয়লার কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলু ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। আর শীতকালীন সবজি ও মাছের বাজার স্থির। শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর তালতলা ও শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লারের কেজি ছিল ১৮০ টাকা। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি সোনালি মুরগি। তালতলা বাজারে মুরগি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহের ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।

আগের সপ্তাহে ১৭০ টাকা করে বিক্রি করেছিলাম। চলতি সপ্তাহে ব্রয়লার ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। তিনি বলেন, ক্রমাগত মুরগির দাম বাড়ছে। শুধু ব্রয়লার নয় সোনালি, সোনালি হাইব্রিড ও লেয়ার মুরগিরও বাজারও চড়া। আমরা সোনালি ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা কেজি, লেয়ার ২৯০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

এসব বাজারে শীতকালীন সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে নতুন আলু আর হঠাৎ বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। দেশি নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো হওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। এ নিয়ে তালতলা সড়কে বসা ভ্রাম্যমাণ বাজারের আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা হারুন বলেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে প্রচুর নতুন আলু ও পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় নতুন আলুর দাম কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। একই সঙ্গে অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের দামও কমতে শুরু করেছে। বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।

শিম ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ৮০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা এবং গাজর ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) এসব বাজারে বেগুন ৫০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায়, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, কলার হালি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জালি কুমড়া ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, আলু ৫০ টাকা, নতুন আলু ৬০ টাকা, নতুন উঠা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ টাকা দরে, পেঁয়াজের কলি ৬০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে লাল শাকের আঁটি ১০ টাকা, লাউ শাক ৩০ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা, কলমি শাক ৮ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম ১৩০ টাকা, হাঁসের ডিম ২০০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আগের সপ্তাহে লাল ডিম ১২০ টাকা ডজন বিক্রি হয়েছিল। বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৫৮০ থেকে ৬৫০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। গরুর মাংসের দাম কিছুটা কম থাকায় মাছের বাজার স্থির রয়েছে। শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) ৪০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছের কেজি ৭০০ টাকা, চাষের শিং (আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, রুই (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, মাগুর ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা , মৃগেল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল ৪০০ থেকে ৯০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ৯০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকায়, পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার টাকা, বাইম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, দেশি কই ১ হাজার টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং কাকিলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে অসৎ মজুতদারদের কারসাজিতে রাতারাতি অযৌক্তিক মূল্য বাড়ার পর রাজধানীর বাজারে এবার কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। এ সংকটের শুরু হয় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর থেকে। তবে, এবার দাম বাড়ার পর দেখা গছে ভিন্ন চিত্র। এবার বাড়তি দামের বিরুদ্ধে এক হয়েছেন ভোক্তারা। সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে পেঁয়াজ কেনা থেকে বিরত থাকতে প্রচারণা চালানো হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। এছাড়া বাজারে আসতে শুরু করেছে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ। সব মিলিয়ে ঝাঁজ কমছে পেঁয়াজের।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দাম কম হওয়ায় বাজারে বেশি বিক্রি হচ্ছে নতুন পেঁয়াজ। সে সঙ্গে পেঁয়াজ পাতারও চাহিদা বেড়েছে। বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি, দেশি পুরাতন পেঁয়াজ ২০০ টাকা আর তুরস্ক থেকে আমদানি করা বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। অন্যদিকে, বেশি দামে কিনে রাখায় বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে ভারতীয় পেঁয়াজ। এমনকি পচতেও শুরু করেছে অনেকের পেঁয়াজ।

ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রেতা দোকানিরা পেঁয়াজের পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও সেগুলোতে ক্রেতা নেই বললেই চলে। ফলে, অনেকের পেঁয়াজই পচতে শুরু করেছে, যেগুলো আলাদা করে আরও কম দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। মহাখালী কাঁচা বাজার এলাকার পেঁয়াজ বিক্রেতা শাহ আলম জানান, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পরপরই বেশি দামে বিক্রির আশায় ভারতীয় পেঁয়াজ কিনে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় ভোক্তাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া এবং নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসায় মাথায় হাত তার। বাধ্য হয়েই লোকসানে ছাড়তে হচ্ছে তার পেঁয়াজ। ভ্যানে করে দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তাফাজ্জল হোসেন নামে এক বিক্রেতা।

তিনি বলেন, নতুন পেঁয়াজ একটু বড় সাইজের ১০০ টাকা, আর ছোট সাইজের ৯০ টাকা কেজি করে বিক্রি করছি। মানুষ এখন নতুন পেঁয়াজটাই বেশি নিচ্ছে। দাম আরও কমবে উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী বলেন, চলতি সপ্তাহে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ আরও বাড়বে বাজারে; তখন দাম আরও কমবে। বাজারে পেঁয়াজ কিনছিলেন আখলাকুজ্জামান নামে একজন।

তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম কমেছে কিছুটা। আমাদের মধ্যবিত্তের জন্য তো এমনিই কষ্ট। আমরা যদি সবাই মিলে পেঁয়াজের ব্যবহার একটু কমিয়ে দেই, তাহলেই দেখবেন দাম আগের জায়গায় ফিরে আসবে। নতুন পেঁয়াজও বাজারে এসে গেছে, আশা করছি দাম আরও কমে আসবে। এর আগে, গত ৮ ডিসেম্বর এক আদেশে আগামী মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায় ভারত। এ সিদ্ধান্ত আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এক লাফে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, এমনকী বাজারভেদে ২৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে যায় ভারতীয় পেঁয়াজের দাম।