নিজস্ব প্রতিবেদক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে নাশকতার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দুষ্কৃতকারীদের লক্ষ্য দেশি-বিদেশি নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। যার ফলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারে উদ্যোগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ -বেবিচক। এজন্য বিমানবন্দরগুলোতে অতিরিক্ত আর্মড পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর মধ্যে বর্তমান জনবলের পাশাপাশি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত ১০০ সদস্য নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়োগ দেওয়া হবে এপিবিএনের অতিরিক্ত ৬০ সদস্য। পাশাপাশি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অতিরিক্ত ৫৪ আনসার সদস্য দেওয়া হবে।
বেবিচক সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি বৈঠক করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এই বৈঠকে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টি আসে। পরে গত ৫ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আহম্মেদ জামিলের সই করা এক চিঠিতে নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয় সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানকে।
ওই চিঠিতে সিকিউরিটি পাসের অপব্যবহার রোধ, সিসিটিভি ক্যামেরা সচল রেখে ফুটেজ যথাযথভাবে রেকর্ড করাসহ ১২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। বেবিচক সূত্র জানায়, বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেবিচকের নিজস্ব ৫৭৪ নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত আছেন। এপিবিএনের আছেন এক হাজার ৮৫, আনসারের ৯০২ জন। এছাড়া ইন্সট্রাকশন রিগার্ডিং এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ারের আওতায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাধ্যমে বিমান বাহিনী ও জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সংযুক্ত পুলিশ ও আনসারের আরও ২৮৩ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।
এর বাইরে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় বর্তমানে ২৪টি সংস্থা কাজ করছে। তাদের সবাইকে যার যার দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে আসা যানবাহন, যাত্রীদের সঙ্গে থাকা সরঞ্জাম বা ব্যাগ থেকেও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্ব পালনের সময় আরও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে জাতীয় গুরুত্বপূণ স্থাপনায় হামলার আশঙ্কার পাশাপাশি ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও পূর্বশত্রুতার কারণেও টার্গেট কিলিংয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রতিটি নির্বাচনি আসনের খোঁজখবর নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে ইতোমধ্যে তা শীর্ষ প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছে। এদিকে নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, এটিকে কেন্দ্র করে নাশকতামূলক তৎপরতার শঙ্কাও তত বাড়ছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীগুলোও বাড়িয়েছে তৎপরতা। যারা নাশকতা করতে পারে, তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছে বিভিন্ন সংস্থা। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন।
বৈঠকে নাশকতা ঠেকাতে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে। নাশকতা প্রতিরোধে তিনটি ছক করে নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পরে সম্ভাব্য সব ধরনের নাশকতা রুখে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। সব জায়গায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
নির্বাচনের দিন প্রিসাইডিং অফিসারসহ ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার পাশাপাশি মানুষ যাতে অবাধে ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনের পরও যে কোনো ধরনের নাশকতা হতে পারে সেজন্যও প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। টার্গেট কিলিংয়ের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে নাশকতামূলক তৎপরতার শঙ্কা আগে থেকেই ছিল সংশ্লিষ্টদের কাছে। সম্প্রতি এ শঙ্কা আরও বেড়েছে।
আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সামনে যে ধরনের সহিংসতা হতে পারে- সেটা সংস্থা থেকে তথ্য নিয়ে সারা দেশে নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারিও থাকবে, যাতে কেউ কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে না পারে। দেশব্যাপী পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা বিরাজমান থাকবে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের -র্যাব বলছে, নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য নাশকতা রুখতে র্যাবের পোশাক ও গোয়েন্দা দুই ধরনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নাশকতা-সহিংসতাসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- ঠেকাতে র্যাব প্রস্তুত রয়েছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম