November 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, January 4th, 2024, 9:02 pm

যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তাইওয়ান

অনলাইন ডেস্ক :

তাইওয়ানি মাইক্রোচিপ মোগল রবার্ট সাও তার সর্বশেষ মাল্টি-মিলিয়ন ডলারের উদ্যোগের কথা ঘোষণার সময় তার দেশ এবং সভ্যতার ভবিষ্যত রক্ষার সাহসী প্রতিশ্রুতিও দেন। বুলেটপ্রুফ পোশাক পরে ৭৬ বছর বয়স্ক এই উদ্যোক্তা সম্ভাব্য হামলা থেকে তাইওয়ানকে রক্ষার জন্য ৩৩ লাখ ‘বেসামরিক যোদ্ধাকে’ প্রশিক্ষণ প্রদানের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাইওয়ানকে চীনা মূল ভূখন্ডের সাথে একীভূতকরণ নিয়ে বাগামম্বড়তা বাড়িয়েছে, চাপ সৃষ্টি করছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত রোববার নববর্ষের বক্তৃতায় বলেন, চীন অবশ্যই একীভূত করবে, তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাড়ের চীনারা চীনা জাতির অভিন্ন উদ্দেশ্যে একত্র হবে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধির ফলে তাইওয়ানের অনেক সাধারণ নাগরিকই বিষয়টি নিজের হাতে তুলে নেয়ার কথা বলছেন। সাওয়ের কুমা অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ চালু হওয়ার পর সিভিল ডিফেন্স কোর্সের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। আয়োজকেরা বলছেন, বেশিভাগ অংশগ্রহণকারীই নারী ও তরুণ মা-বাবা। তারা হামলা বা অবরোধের ক্ষেত্রে তাদের সন্তানদের পরিচর্যা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। কুমা অ্যাকাডেমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পুমা শেন বলেন, ‘তারা চায় না, তাদের সন্তানরা যুদ্ধের মুখে পড়ুক, তারা চায় বেঁচে থাকতে। টেক টাইকুন সাও ইউনাইটেড মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্স করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা। এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের বৃহত্তম সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী।

অপ্রত্যাশিতভাবে তিনিই তার বিপুল পরিমাণ অর্থ যুদ্ধপ্রয়াসে ব্যয় করছেন। তার পরিবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীনা ন্যাশনালিস্ট কুমিনটাঙের (কেএমটি) বাহিনীর সময় তাইওয়ানে পাড়ি জমিয়েছিল। তিনি যখন বেড়ে ওঠছিলেন, তখন তাইওয়ান ছিল চিয়াং কাইসেকের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। চিয়াং কাইসেক তার কমিউনিস্ট প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে যে সন্ত্রাস চালিয়েছিলেন, সেটা ‘হোয়াইট টেরর’ আমল হিসেবে পরিচিত। তিনি ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শেষ করে সরকারের ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে যোগ দেন। এই প্রতিষ্ঠানটি তাইওয়ানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পকে বিকশিত হতে সহায়তা করে। সাও ১৯৮০ সালে তার কোম্পানি ইউএমসি প্রতিষ্ঠা করেন।

তবে চীনে প্রোডাকশন লাইন প্রতিষ্ঠার জন্য অবৈধ বিনিয়োগ করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি তাইওয়ানের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। তিনি তখন ছিলেন শান্তিপূর্ণ ‘একীভূতকরণের’ সক্রিয় সমর্থক। এমনকি এ নিয়ে গণভোট আয়োজনের জন্য তিনি প্রধান প্রধান তাইওয়ানি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিতেন। তবে তিনি গত বছর আবার তাইওয়ানি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। এ সময় তিনি বলেন, হংকংয়ে বেইজিংয়ের দমন অভিযান দেখে তার মতের পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি আর কখনো চীনে যাবেন না। গত সেপ্টেম্বরে সাও কুমা অ্যাকাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে বেসামরিক যোদ্ধা সৃষ্টির জন্য এক বিলিয়ন তাইওয়ানি ডলার (৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রদানের কথা ঘোষণা করেন।

তিনি স্বল্প-ব্যয়ে ড্রোন নির্মাণেল জন্যও স্থানীয় শিল্পের সাথে সহযোগিতার পরিকল্পনা করছেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের হিসাব অনুযাযী, চীনা সামরিক শক্তির সামনে তাইওয়ানি বাহিনী কোনোভাবেই সমকক্ষ নয়। চীনের ২০ লাখ সক্রিয় সৈন্যের বিপরীতে তাইওয়ানের আছে মাত্র এক লাখ ৭০ হাজার। ট্যাংক পাঁচগুণ, বিমান ছয়গুণ বেশি আছে চীনের। এমন অবস্থায় চীনের সম্ভাব্য হামলা আগামী বছর থেকে ১৮ বছরের বেশি বয়সের সবার জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ চার মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করা হচ্ছে। সূত্র : এবিসি