November 23, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, January 14th, 2024, 7:50 pm

খুলনায় শীত উপেক্ষা করে ঝিনুক কুড়িয়ে বাড়তি আয়ে খুশি এলাকাবাসী

খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া খালে হঠাৎ যেন টাকার খনি পাওয়া গেছে! এলাকার শিশু, কিশোর, নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থী এমনকি বয়স্করাও যেন কিছু একটা খুঁজছেন।

কেউ পানিতে ডুব দিয়ে তুলছেন, আবার কেউ তীরে খুঁজে চলেছেন। মাঝে মধ্যে শীতে কাঁপতে কাঁপতে রাস্তার ওপর উঠে রোদে গাঁ শুকিয়ে আবারও নামছেন পানিতে।

খালের পাশ দিয়ে হেটে যেতে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে সেখানে। পাশে যেয়ে জিজ্ঞাসা করতেই জানা গেল, ঝিনুক খুঁজছেন তারা। খালে প্রচুর ঝিনুক পাওয়া যাচ্ছে। তা কুঁড়িয়েই ভালো আয় হচ্ছে তাদের।

তবে খালে কাঁচের টুকরা কিংবা ঝিনুকের খোলসে হাত-পা কেটে আহতও হওয়ার কথাও জানান তারা।

এদিকে, উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শামুক-ঝিনুক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এরা যেসব জলাশয়ে থাকে সেখান থেকে ময়লা-আবর্জনা খেয়ে পানি দূষণমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। এজন্য এদেরকে প্রকৃতির ফিল্টার বলা হয়।

হোসেন গাজী নামে ষাটোর্ধ বৃদ্ধ বলেন, কয়েকদিন ধরে ঝিনুক কুঁড়িয়ে বেশ আয় হচ্ছে। প্রতিদিন ৭০/৮০ কেজি ঝিনুক পাচ্ছি।

শীত লাগছে কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘গরীবের আবার শীত! সৎভাবে কিছু আয় হচ্ছে এটাই বড় কথা। বসে নেই এলাকার নারীরাও। তারাও দরিদ্র সংসারে আয়ের খবরে খুশি মনে খাল থেকে ঝিনুক তুলছেন।’

তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে অনেকেই লজ্জায় কথা বলেননি।

দেয়াড়া গ্রামের শাহিনুর রহমান, স্বপরিবারে ঝিনুক কুঁড়াচ্ছেন। আবার এলাকার লোকদের কাছ থেকে কিনে ২০ কিলোমিটার দূরের পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী বাজারে বিক্রিও করছেন তার ছেলে আজমল।

আজমল বলেন, ‘আমাদের কুঁড়ানো ৩-৪ মণের সঙ্গে এলাকা থেকে ১০-১২ মণ কিনে নিজ ভ্যানে চাঁদখালী বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছি। ভালো আয় হচ্ছে।’

তামিম নামের এক কিশোর বলেন, ‘৪ দিন আগে জানতে পারি। প্রতিদিন দেড়-দুই মণ ঝিনুক পাচ্ছেন তিনি। প্রথম দিন ৪ টাকা কেজি বিক্রি করেন। তবে আজ বিক্রি হয়েছে ৬ টাকা কেজি।’

শিমলার আইট গ্রামের কয়েকজন নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, ভাটায় খালে পানি কমে যায়। তখন তুলতে সুবিধা হয়। প্রতিদিন ৩-৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করে অনেকে ৬-৭ শত টাকাও আয় করছেন। যে যেমন তুলতে পারছেন তার আয় তেমন হচ্ছে।

হুদুবনের হাফিজুল ইসলাম বলেন, এলাকা থেকে কিনে পাইকগাছায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মণ বিক্রি করছি। এ খাল থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ ব্যক্তি ৮-৯ শত মণ ঝিনুক তুলছেন।

তিনি আরও বলেন, আগে কখনও এগুলো বিক্রি হতে দেখিনি। মাঝে মধ্যে কাউকে কাউকে কুঁড়াতে দেখা গেছে। তবে তারা বিক্রির কথা স্বীকার করতেন না। হঠাৎ ১০-১৫ দিন ধরে এ এলাকায় বিক্রি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। আর তখন থেকে খালে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে শামুক ও ঝিনুক ক্রয় করে আসছেন। মূলত বর্ষার মৌসুমে বেশি পাওয়া যায়। সুন্দরবন থেকে শামুক-ঝিনুক কুঁড়িয়ে সেখানে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে উপকূলের বহু পরিবার।

চাঁদখালী বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, তারা ৩৫০ টাকা মণ কিনছেন। এটা দিয়ে চুন তৈরি করে বিক্রি করছেন তারা। তবে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. কাইয়ুম হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি প্রথমে স্বীকার করেন চাঁদখালী বাজারের বেশ কিছু ব্যক্তি ঝিনুকের ব্যবসা করেন। তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।

কয়রা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক বলেন, ‘শামুক-ঝিনুক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এগুলোকে প্রকৃতির ফিল্টার বলা হয়। তবে কিছু ক্ষুদ্র শামুক রয়েছে সেটা মাছ চাষের জন্য ক্ষতিকর।’

তিনি আরও বলেন, বণ্যপ্রাণী নিধন আইনে প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে শামুক-ঝিনুক আহরণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অবৈধভাবে এ ব্যবসা করলে কিংবা প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে আহরণ করলে আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, সমুদ্রের শামুক-ঝিনুক আহরণ ও ব্যবসা করা আইনত অপরাধ। চাঁদখালী বাজারে কেনাবেচার বিষয়ে তার জানা নেই। খোঁজ নিবেন বলে জানান তিনি।

—–ইউএনবি