নিজস্ব প্রতিবেদক:
পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোকে সংযুক্ত করে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৮০০ ফুট উপরে দেশের সর্বোচ্চ উঁচু সড়কের নির্মাণ কাজ পুরোদমে চলছে। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেন, মায়ানমার ও ভারতের সীমান্তে ৩১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি আন্তঃসীমান্ত অপরাধমূলক কর্মকান্ড রোধ করতে এবং পাহাড়ি জনগণের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের ১৬, ২০ এবং ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সীমান্ত সড়ক নির্মাণে কাজ করছে, প্রকল্পটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ৩১৭ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১৯০ কিলোমিটার নির্মিত হয়েছে এবং বাকি ১২৭ কিলোমিটার ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে রাস্তা নির্মাণ করা চ্যালেঞ্জিং, বিশেষ করে বর্ষাকালে। এই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, এসব বাধা সত্ত্বেও, সীমান্ত সড়ক নির্মাণ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা বা বড় ধরনের বিপর্যয় ছাড়া, আমরা আশা করছি বছরের শেষ নাগাদ প্রকল্পটি শেষ হবে। দুই লেনের এই সড়ক ১৮ ফুট প্রশস্ত। দুর্গম পাহাড়কে মূল জনপদের সঙ্গে যুক্ত করছে দীর্ঘ এই রাস্তা। পাহাড়ের দুর্গম আর ‘দুর্গম’ থাকছে না। সীমান্তের এপার-ওপারকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে প্রত্যন্ত সীমান্ত বরাবর সীমান্ত সড়ক মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা এবং মানব পাচার প্রতিরোধে সহায়তা করবে। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, এই সীমান্ত সড়কটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করবে এবং পাহাড়ি জনগণের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে। তারা তাদের কৃষিপণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে পরিবহন করতে পারবে। সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের পাহাড়ি এলাকার পর্যটনও চাঙ্গা হবে।
সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের পরিচালক মোঃ আতাউর রহমান বলেন, সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হলে উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করবে এবং দেশের পার্বত্য জেলাগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাবে। প্রথম ধাপের কাজ শেষ হওয়ার পর আমরা দ্বিতীয় ধাপে আরও রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা করছি। প্রকল্প নির্মাণে চ্যালেঞ্জের বিষয়ে মোঃ আতাউর রহমান বলেন, পাহাড়ে কোনো সারিবদ্ধতা ছিল না। পাহাড় কেটে সারিবদ্ধ করতে হয়। তাছাড়া বৃষ্টি হলে নির্মাণসামগ্রী প্রকল্পের জায়গায় নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এসব কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে।
এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত এক প্রকল্প কর্মকর্তা বলেন, পার্বত্য এলাকায় বর্ষাকালে প্রায়ই ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এসব এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞার কারণে স্থানীয় বালু ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে চট্টগ্রাম থেকে দুর্গম পাহাড়ে অনেক উপকরণ নিয়ে যেতে হয়। এতে অনেক সময় লাগে এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এসব এলাকায় নির্মাণ শ্রমিক পাওয়াও একটি চ্যালেঞ্জ। পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোঃ হাদিউজ্জামান বলেন, পাহাড়ে রাস্তা নির্মাণ নিঃসন্দেহে একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। এ ধরনের সড়ক নির্মাণের জন্য বিচক্ষণ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পাহাড়ি এলাকায় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে যা রাস্তার ক্ষতি করতে পারে। পাহাড়ি সড়কগুলোকে টেকসই করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ভালো মানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় যে কাজগুলো হচ্ছে সেগুলো হলো, সড়ক খনন, রাস্তার পাশে মাটির বাঁধ নির্মাণ, ৩৬টি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ, ২২১টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, ৬টি বড় সেতু। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১,৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ জানুয়ারী ২০১৮ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সময় নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। পরে আবার মেয়াদ ও খরচ বেড়ে যায়। সংশোধিত সময়সূচী অনুসারে, প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা এবং ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩,৮৬১ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তির পর তিন পার্বত্য জেলায় অবকাঠামো খাতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। শান্তিচুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত তিন পার্বত্যাঞ্চলে পাকা রাস্তা নির্মাণ হয়েছে ১ হাজার ২১২ কিলোমিটার। কাঁচা সড়ক ৭০০ কিলোমিটার, সড়ক সংস্কার ৬১৪ কিলোমিটার ও ব্রিজ নির্মাণ ৯ হাজার ৮৩৯ মিটার ও কালভার্ট ১৪১টি।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি