দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে বছরের নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
এমনকি জাটকা ধরার পর পদ্মা নদীর পাড় দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে প্রকাশ্যে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ২০০৩ সালের মৎস্য সংরক্ষণ আইনের আওতায় প্রতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৭ মাস জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ইলিশের প্রজনন মৌসুমে হেরফের হওয়ায় সরকার ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে সময়সীমা আরও এক মাস বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করে।
মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ সাল অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞাকালীন জাটকা ধরা, সংরক্ষণ, পরিবহন, বিপণন দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন অনুযায়ী ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটার আকৃতির ইলিশ জাটকা হিসেবে গণ্য হবে। এই আইন কেউ অমান্য করলে ন্যূনতম এক বছর থেকে দুই বছরের জেল অথবা ৫ হাজার টাকা জরিমনা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিতের বিধান রাখা হয়েছে।
এ সময় যারা জাটকা আহরণ, বিপণন, পরিবহন করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা হবে। এ আইন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্পৃক্ত থাকবেন।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত দৌলতদিয়া ঘাট মাছ বাজারে দেখা যায়, অন্তত ১০টি আড়তে জাটকা ইলিশ নিলামে বিক্রি হচ্ছে। আড়তদার জাটকা বিক্রির জন্য ডালার ওপর তুলে হাঁকডাক করছেন।
আকার বেধে ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি পর্যন্ত নিলামে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা দরদাম করে সর্বোচ্চ দরদাতাকে দিয়ে দিচ্ছেন। একেকজন আড়তদারের কাছে ২০ কেজি থেকে ৪০ কেজির মতো জাটকা দেখা গেছে।
স্থানীয় আড়তদার বাচ্চু শেখ বলেন, পদ্মা ও যমুনা নদীতে জেলেরা রাতভর এসব জাটকা শিকারের পর বিক্রির জন্য ভোরে দৌলতদিয়া বাজারে আনলে আমরা শুধু নিলামে ডাক হাঁকছি। সর্বোচ্চ দরদাতা যিনি হচ্ছেন, তিনি কিনছেন। এক কেজিতে ৮-১০টি করে জাটকা পাওয়া যাচ্ছে। জাটকা শিকার বা বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও এখন পর্যন্ত কোনো অভিযান দেখিনি।
দুলাল মন্ডল নামের আরেক আড়তদার বলেন, বাজারের প্রতিটি আড়তে প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে শুরু করে সকাল ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন মাছ বিক্রি হচ্ছে। এ সময় জেলেরা জাটকা নিয়ে আসলে তাও নিলামে বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিন ধরে জাটকা বেশি পরিমাণ ধরা পড়ছে। এ সব জাটকা কিছুদিন পর ইলিশে রূপ নিত। তাতে জেলেরাসহ সকলেই উপকৃত হতো।
দৌলতদিয়া ঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘মৎস্য অফিস যখন অভিযান চালায় তখন তাদের সহযোগিতায় আমরা সঙ্গে থাকি। এছাড়া নৌপুলিশও খবর পেলে তাৎক্ষণিক অভিযান চালায়।’
ফাঁড়ির কাছে বাজারে প্রকাশ্যে নিলামে জাটকা বিক্রি তাদের চোখে পড়েনি বলে তিনি দাবি করেন। তবে চোখে পড়লে অভিযান চালানো হবে বলে জানান।
উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুবর্ণা ফেরদৌস বলেন, ‘জাটকা শিকার, বিপণন, সংরক্ষণ, পরিবহন দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে আমরা শতভাগ সজাগ রয়েছি। এর আগে এ ধরনের খবর পাওয়া মাত্র অভিযান চালিয়েছি, কাউকে পাইনি। যেহেতু এখন জানতে পারলাম অবশ্যই অভিযান চালানো হবে।’
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি