নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিধি ভঙ্গ করে টিভ্যাস (টেলিকম ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস) সেবা দেওয়ায় মোবাইল ফোন অপারেটর রবি ও বাংলালিংককে জরিমানা করেছে বিটিআরসি। অপারেটর দুটির প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের অবৈধ বা বেআইনি বা কমিশনের নির্দেশনার পরিপন্থী কার্যক্রমে লিপ্ত না হওয়ার জন্যও প্রতিষ্ঠান দুটিকে (রবি ও বাংলালিংক) সতর্ক করে চিঠি পাঠানো হয়। বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন বৈঠকে (২৫৪তম) এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, দুটি শর্টকোডের মাধ্যমে রবি এবং একটি শর্টকোডের মাধ্যমে বাংলালিংক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান দুটি ইন্ট্রা-অপারেটর শর্টকোড ব্যবহার করে অবৈধ টিভ্যাস সেবাদানসহ এ-সংক্রান্ত কিছু নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, দেশে নিবন্ধিত টিভ্যাস কোম্পানির সংখ্যা ১৮২টি। এই কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরকে কনটেন্ট (রিংটোন, ওয়েলকাম টিউন, গান ইত্যাদি) সরবরাহ করে, যা টিভ্যাস নামে পরিচিত। রবির বিরুদ্ধে শুধু দুটি শর্টকোডের মাধ্যমে অন-নেট সেবা প্রদান করার কথা থাকলেও আইসিএক্স হয়ে অবৈধভাবে অফনেটে টিভ্যাস সেবা প্রদান, টিভ্যাস প্রোভাইডারের সার্ভার স্থাপন, টিভ্যাস প্রোভাইডারের ব্যাংক হিসাবে রাজস্ব জমা না দিয়ে ভিন্ন নামের ব্যাংক হিসাবে রাজস্ব জমা করার মতো অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অপরদিকে বাংলালিংকের বিরুদ্ধে একটি শর্টকোডের মাধ্যমে অন-নেট সেবা প্রদান করার কথা থাকলেও আইসিএক্স হয়ে অবৈধভাবে অফ-নেটে টিভ্যাস সেবা প্রদান, টিভ্যাস প্রোভাইডারের সার্ভার স্থাপন, টিভ্যাস প্রোভাইডারের ব্যাংক হিসাবে রাজস্ব জমা না দিয়ে ভিন্ন নামের ব্যাংক হিসাবে রাজস্ব জমা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টিভ্যাস সেবাদানের নিবন্ধন প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বিএনজি অ্যাডভান্স সফটওয়্যার সলিউশন্স লিমিটেড হলো সেই অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান। এই অভিযোগের ভিত্তিতে বিটিআরসি তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি গঠন করে। ওই কমিটি গত বছরের ৪ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরেজমিনে পরিদর্শন করে এসব তথ্য পায়। ওই পরিদর্শন প্রতিবেদন গত ৬ জানুয়ারি কমিশনের ২৪৮তম বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। ওই বৈঠকে প্রতিষ্ঠান তিনটিকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় এবং পরে ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। পরবর্তী সময়ে কমিশনের ২৫২তম বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয় এবং আবারও রবি ও বাংলালিংকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। অপরদিকে বিএনজি অ্যাডভান্স সফটওয়্যার সলিউশন্স লিমিটেডকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি জরিমানার অর্থ পরিশোধ করে। বিটিআরসির সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে রবি ও বাংলালিংক টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি লাইসেন্সিং গাইডলাইনের শর্ত, অবকাঠামো ভাগাভাগি গাইডলাইনের শর্ত, ন্যাশনাল নাম্বারিং প্ল্যান ২০১৭-এর শর্ত, কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্দেশনা এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ এর বিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে টিভ্যাস (টেলিকম ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস) সেবা দেওয়ার অপরাধে প্রতিষ্ঠান দুটির ওপর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ -এর ধারা ৬৩ ও ৬৫ অনুযায়ী ১০ লাখ টাকা করে প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ করা হলো এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অবৈধ বা বেআইনি বা কমিশনের নির্দেশনার পরিপন্থী কার্যক্রমে লিপ্ত না হওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান দুটিকে (রবি ও বাংলালিংক)সতর্কীকরণ পত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠান দুটিকে অবকাঠামো ভাগাভাগি গাইডলাইনের শর্ত অনুসরণ না করে স্ব স্ব ডাটা সেন্টারে স্থাপিত টিভ্যাস প্রোভাইডার বিএনজি অ্যাডভান্স সফটওয়্যার সলিউশন্স লিমিটেডের যন্ত্রপাতি ১০ কার্য দিবসের মধ্যে অপসারণ করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চিঠি পাঠানোরও সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলালিংক’র হেড অফ করপোরেট কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড সাস্টেইনিবিলিটি আংকিত সুরেকা বলেন, এই বিষয়ে বিটিআরসি থেকে আমরা আজ (রোববার ) একটি চিঠি পেয়েছি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা সবসময় দেশের আইন ও নির্দেশাবলী মেনে চলি। বিষয়টির সমাধানের জন্য আমরা বিটিআরসির সঙ্গে কাজ করবো। অপরদিকে রবি বিটিআরসি থেকে এখনও এ ধরনের কোনও চিঠি পায়নি বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি