ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, অমর একুশে হল ও ফজলুল হক হল নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই বিকাল থেকে এ অসন্তোষ শুরু হয়।
গত ১৫ জুলাই ভোরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর রড ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবারও হামলা চালালে তিনটি হল থেকে শিক্ষার্থীরা পাল্টা হামলা চালালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া করা হয়।
দফায় দফায় বিজ্ঞান অনুষদের হলের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ ভাঙচুর করে হল থেকে বের করে দেয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বারবার বিজ্ঞান অনুষদের হল দখলের চেষ্টা করলে ১৬ জুলাই দিবাগত রাত ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে কবি জসীমউদ্দীন হলের দুই আবাসিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী মোটরসাইকেলে করে সেখানে পৌঁছালে সংঘর্ষ তীব্র হয়। তাদের মধ্যে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী হেদায়েতুল ইসলাম অমর একুশে হলের শিক্ষার্থীরা তাকে মারধর করে এবং তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
পরে ছাত্রলীগের ২০-৩৫ জনের একটি দল মোটরসাইকেলে কর অমর একুশে হলে আসে। নতুন করে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীরা তাদের আটটি মোটরসাইকেল আটক ও ভাঙচুর করে। খবর আসে, কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ছাত্রলীগ নেতারা শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন চেক করছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থকদের টার্গেট করে মারধর করছেন।
আতঙ্কে গণহারে ঢাবি ক্যাম্পাস ত্যাগ
সহিংস সংঘর্ষের ফলে ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী গভীর রাতে এবং আজ ভোরে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে হল থেকে পালিয়ে গেছে। বিজয় একাত্তর হলের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার কারণ জানিয়ে বলেন, ‘আমি হলে থাকলে আমাকে ও আমার সহপাঠীদের ওপর হামলাকারীদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে। গত দুই বছর ধরে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছি। আমি যদি এখন তাদেরকে সহযোগিতা করি তবে আমি নিজেকে কখনই ক্ষমা করতে পারব না। চলে যাওয়াই ভালো।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরবতা
চলমান সহিংসতা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা দৃশ্যত নীরব রয়েছেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন যে কোনও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে যাননি বা হামলার বিষয়ে কোনও বিবৃতি দেননি। তবে কয়েকজন শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিজ্ঞান অনুষদের হলে পাথর নিক্ষেপ করছে। ১৬ জুলাই দিবাগত রাত ৩টার দিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রাজু ভাস্কর্যের সামনে রড, লাঠি, স্টিলের পাইপ ও হকিস্টিক নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় এবং স্লোগান দিতে দেখা যায়।
জরুরি সভা ডাকা হয়েছে
এ সংকট মোকাবিলায় উপাচার্য অধ্যাপক এ কে এম মাকসুদ কামালের বাসভবনে জরুরি প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা ডাকা হয়। কমিটির সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অছাত্রদের প্রবেশ ঠেকাতে সব প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটররা রাতে হলে অবস্থান করবেন।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম