November 22, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 19th, 2024, 7:34 pm

চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড নিয়ে যা বললেন ফারুকী

অনলাইন ডেস্ক :

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বরাবরই সোচ্চার জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। দেশের ভালো-মন্দ ইস্যুতে নিজের মতামত প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে যাচ্ছেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনেও অন্যান্য তারকাদের মতো সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয় ছিলেন এ নির্মাতা। এবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের পুনর্গঠন নিয়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড নতুন করে পুনর্গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

মূলত এই ঘোষণার পর সেন্সর বোর্ডের চিত্র কেমন চান, সেটা ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন ফারুকী। গত রোববার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে ‘গাহি নো সেন্সরের গান’ শিরোনামে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন তিনি। আমাদের সময় পাঠকদের জন্য ফারুকীর স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-‘আপনি কি চান বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে ছবি হোক? মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রক্ষী বাহিনীর অত্যাচার নিয়ে ছবি হোক? আপনি কি চান গুমের মতো নিষ্ঠুর এবং অমানবিক যে কাজটা হাসিনা-জিয়াউল-তারেক সিদ্দিকী মিলে করেছে সেটা নিয়ে ছবি হোক?

ব্রিগেডিয়ার আজমি বা ব্যারিস্টার আরমানের হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে ছবি হোক? আপনি কি চান আমাদের ইতিহাস নিয়ে আওয়ামী গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে কেউ ফিল্ম করুক? কেউ তার ছবিতে প্রশ্ন করুক ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পনে আমাদের উপস্থিতি ছিলো না কেনো? অথবা চান উল্টো দিকে কেউ বিএনপি’র ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে ছবি করুক? তাহলে সেন্সর বোর্ড নামক অথর্ব জিনিসটা বাতিল করেন!

এখন যে সেন্সর নীতিমালা টা আছে, এটা এমন ভাবে বানানো হয়েছে যাতে যে দল ক্ষমতায় থাকবে তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী যে কোনো ছবি যেনো আটকে দেয়া যায়। আমরা চাই যে দলই সরকারে থাকুক ফিল্মমেকারদের গলা যেনো কেউ চেপে ধরতে না পারে। তার বদলে একটা রেটিং সিস্টেম চালু করা উচিত যেখানে বলে দেওয়া হবে কোনটা অ্যাডাল্টদের জন্য, কোনটা প্যারেন্টাল গাইডেন্স লাগবে ইত্যাদি।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে অবাধ স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি একটা ছবি বানায় যেখানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের চরিত্রকে রাজাকার দেখালো কোনো আওয়ামী অন্ধভক্ত ফিল্মমেকার, তখন? অথবা উল্টো দিকে আরেক অন্ধ ভক্ত একটা ছবি বানালো যেখানে বঙ্গবন্ধু ডিজইনফরমেশন দ্বারা আক্রান্ত হলো? এইসব মোটা দাগের বিষয় ঠেকানোর স্পষ্ট বিধান রেখেও নিশ্চয়ই বিধিমালা করা যাবে যেখানে ফিল্মমেকাররা ইতিহাসকে প্রশ্ন করতে পারবে।

পাশাপাশি আমি জানি ধর্মীয় কিছু সেনসিটিভ ব্যাপার সেইফগার্ড করার কথা বলবেন সরকারী কর্মকর্তারা। এটা নিয়ে তারা আগেও বলেছিলেন। আমার উত্তর সেখানেও কি বিধান রাখতে চান স্পষ্ট ল্যাঙ্গুয়েজে রাখেন। ভেইগ টার্মে কিছু রাখা যাবে না যেটার ব্যাখ্যা একশো রকম হতে পারে এবং এই সুযোগ নিয়ে সরকার কাউকে হয়রানি করতে পারে। আমার মনে আছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার শেষ যে আমি-ডামি নির্বাচন করল তার আগে আমরা একটা আন্দোলন করেছিলাম সব ফিল্মমেকার মিলে। সেন্সর প্রথার বিরুদ্ধে। তখন আরাফাত সাহেবের সঙ্গে আমাদের একবার মিটিং হয়েছিল এবং উনি আমাদের সঙ্গে সব বিষয়ে একমত ছিলেন। কিন্তু আমরা কি দেখলাম? ক্ষমতার চেয়ারে বসেই উনি আগের ফিল্ম সেন্সর নীতিমালা তো বাতিল করলেনই না বরং ওটিটির জন্যও একটি সেন্সর নীতিমালা নিয়ে আসলেন!

এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য ছিল ফিল্মমেকারদের গলা চেপে ধরা যাতে ওনাদের কোন সমালোচনা না হয়। ফলে চলচ্চিত্র সেন্সর নীতিমালা সংশোধনের পাশাপাশি ওটিটি সেন্সর বাতিল করতে হবে। আপনি আমাদেরকে খেলতে বলবেন নেটফ্লিক্স-প্রাইমের সাথে আর হাত পা রাখবেন বেঁধে- এটা তো হয় না। আমি বুঝতে পারছি চলচ্চিত্র সেন্সর নীতি সংশোধনের আগ পর্যন্ত আপাতত কাজ চালানোর জন্য সেন্সর বোর্ডটাতো পূনর্গঠন করতে হবে। করেন সেটা। কিন্তু দয়া করে প্রাগৈতিহাসিক এফডিসির ততোধিক প্রাগৈতিহাসিক পরিচালক বা প্রযোজকদের এই কমিটিতে ঢোকানোর যে আজব অভ্যাস আছে সেটা থেকে বের হয়ে আসেন। বাংলাদেশের নতুন দিনের ফিল্মমেকাররা প্রত্যেকেই এদের ঈর্ষার শিকার। কমিটিতে সেনসিবল লোকজন নেন প্লিজ। অনুদান কমিটিও একই রকমভাবে দলীয় প্রোপাগান্ডা মেশিনের হাত থেকে উদ্ধার করেন। সেটা করার অনেক উপায় আছে। বিস্তারিত সাক্ষাতে। ধন্যবাদ।’