November 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, September 23rd, 2021, 7:46 pm

ফিরে ভালো লাগছে, যেখানে আমার ঠিকানা: মুশফিক

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নিজের অফিসিয়াল ফেইসবুক পাতায় বৃহস্পতিবার একটি ছবি পোস্ট করেছেন মুশফিকুর রহিম। তাকে ব্যাটিংয়ের কিছু একটা দেখিয়ে দিচ্ছেন বিকেএসপির ক্রিকেট পরামর্শক নাজমুল আবেদীন। ছবির সঙ্গে মুশফিকের ক্যাপশন, “ফিরে ভালো লাগছে, যেখানে আমার ঠিকানা। বিকেএসপি আমার ঘর।” এবার মুশফিকের এই ‘ঘরে’ ফেরা একটি বিশেষ তাড়নায়। সেই গল্প শোনালেন ঘরের মানুষদের একজন, নাজমুল আবেদীন। মুশফিক, সাকিব আল হাসানসহ দেশের অনেক ক্রিকেটারের শৈশবের গুরু নাজমুল আবেদীন। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রায় ১৭ বছর কাজ করেছেন বিকেএসপিতে। এরপর ১৪ বছর বিসিবিতে নানা ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করে বছর দুয়েক আগে আবার ফিরে যান বিকেএসপিতেই। তবে ক্রিকেটারদের সঙ্গে তার সম্পর্ক অটুট সবসময়ই। নানা প্রয়োজনেই নাজমুলের ক্রিকেটীয় জ্ঞান আর অভিজ্ঞতার আশ্রয় খোঁজেন ক্রিকেটাররা। এবার মুশফিকও তার শরণাপন্ন হয়েছেন বিশেষ প্রয়োজনে। চলছে তিন দিনের নিবিড় সেশন। এই মাসেই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটি ব্যাট হাতে দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের। টি-টোয়েন্টিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সময়টা ভালো কাটছে না তার বেশ অনেক দিন ধরেই। সবশেষ ৮ ইনিংসে ২০ ছাড়াতে পারেননি তিনি। ২০১৯ সালের ভারত সফরে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪৩ বলে ৬০ রানের ম্যাচ জেতানো দুর্দান্ত একটি ইনিংস তিনি খেলেছিলেন। সবশেষ ২৫ ম্যাচে তার ফিফটি ওই একটিই। এই ২৫ ম্যাচে তার ব্যাটিং গড় ১৬.৪৭, স্ট্রাইক রেট ১০২.৪৭। এই সংস্করণ নিয়ে নতুন ভাবনার তাগিদ তাই মুশফিকের ভেতরে জেগে ওঠারই কথা। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিউ জিল্যান্ড সিরিজ শেষে মুশফিক দীর্ঘদিন পর কড়া নাড়েন বড় ভরসার সেই দুয়ারে। দুজনের আলোচনার ফসল এই সেশনগুলো,  জানালেন নাজমুল। “ওর সঙ্গে সবশেষ কাজ করেছি প্রায় দুই বছর আগে। গ্যাপ তো পাওয়া যায় না কাজ করার। এখন একটু মিলেছে। সামনে একটা বিশ্বকাপ, দুজনই ভাবলাম এই সময়টা কাজে লাগানো যেতে পারে। সামনে যেহেতু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, সেটা মাথায় রেখেই কিছু কাজ করা হচ্ছে।” সেসব কাজের মধ্যে টেকনিক্যাল কিছু দিকও আছে। সেগুলো অবশ্য খোলাসা করতে চাইলেন না নাজমুল। “কিছু টেকনিক্যাল ব্যাপার তো আছেই। তবে ওগুলো আসলে আলাপ করার ব্যাপার নয়। এটুকু বলছি, ওর টি-টোয়েন্টির পারফরম্যান্সে যেন উন্নতি করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই হচ্ছে কাজ।” টেকনিকের পাশাপাশি মানসিক দিক নিয়েও কাজ চলছে বলে জানালেন নাজমুল। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে মুশফিক ৫ ইনিংসে কেবল ৩৯ রান করতে পারেন ১৩ গড়ে। স্ট্রাইক রেট ছিল মোটে ৫২। এই পরিসংখ্যান যা বলছে, তার ব্যাটিং ছিল আরও বেশি হতাশার। উইকেট যদিও ব্যাটিং প্রতিকূল ছিল, তবে এই ধরনের উইকেটে বরাবরই দল বেশি করে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। কিন্তু গোটা সিরিজে একদমই স্বচ্ছন্দ ছিলেন না মুশফিক। উইকেটে তাকে একদমই অচেনা মনে হয়েছে। নাজমুলের মতে, মুশফিকের বিবর্ণ থাকার মূল কারণ ছিল মানসিক বাধা। “এই সিরিজে প্রতিটি ম্যাচেই আমরা দ্রুত উইকেট হারিয়েছি শুরুতে। মুশফিকের যে ধরন, সে চেষ্টা করেছে ইনিংস গড়তে। এজন্যই হয়তো যে গতি ও ছন্দে সে খেলতে পছন্দ করে বা খেলা উচিত ছিল, সেই ঝুঁকি সে নিতে পারেনি। উইকেট ধরে রাখা, ইনিংস গড়ায় মনোযোগ বেশি ছিল। এই উইকেটে আগ্রাসী খেলা কঠিন। সে হয়তো ভেবেছে, মারতে গিয়ে আউট হলে দল বিপদে পড়বে আরও। এই ভাবনায় নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে।” “মানসিক ব্যাপারই ছিল মূলত। ওই মেন্টাল ফ্রেমের বাইরে গিয়ে সাহস করে উঠতে পারেনি। বারবার একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেলে, একজন ব্যাটসম্যানের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। সেসব নিয়েই কাজ করছি আমরা।” বুধবার ঘণ্টা তিনেক কাজ করেছেন দুজন। বৃহস্পতিবার হয়েছে ঘণ্টা দুয়েকের সেশন। শুক্রবার আরেক সেশন দিয়ে আপাতত সমাপ্তি। এরপর ম্যাচ অনুশীলনের জন্য মুশফিক ছুটবেন চট্টগ্রামে। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে হাই পারফরম্যান্স দলের বিপক্ষে একদিনের ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুটিতে খেলবেন তিনি। মুশফিকের সঙ্গে কাজ করার কিছু ফসল বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে এই সিরিজে ও বিশ্বকাপে দেখা যাবে বলে আশাবাদী নাজমুল। “(ওকে) খুব ভালো মনে হচ্ছে। বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে। আমার ধারণা, ওকে আমরা কিছু শট খেলতে দেখব, যেসব খেলতে ওকে আগে দেয়া যায়নি। হয়তো হতে পারে। টি-টোয়েন্টিতে একটা ওপেন ব্যাপার আছে, খোলা মন নিয়ে থাকা। অন্য ফরম্যাটের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতে রান করার হিসাব অন্যরকম। এই শটগুলি খেলতে পারলে, সেদিক থেকে হয়তো সুবিধা সে পাবে।” “অবশ্য আগে থেকে আন্দাজ করা কঠিন। অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। চট্টগ্রামে ‘এ’ দলের দুটি একদিনের ম্যাচ খেলবে, সেখানে হয়তো বোঝা যাবে। সেখানে চেষ্টা করবে, যদি সুযোগ থাকে। ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী সামনেও দেখা যাবে হয়তো।”