জেলা প্রতিনিধি:
১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে পানির নিচে রয়েছে রাঙ্গামাটির পর্যটনের আইকন হিসেবে পরিচিত ঝুলন্ত সেতুটি। কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন পর্যটকরা।
প্রকৃতির রূপের ভাণ্ডার রাঙ্গামাটি জেলার ঝিরি, ঝর্ণা, সবুজ উপত্যকা, কাপ্তাই হ্রদ, মাচাং ঘর পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক রির্সোট, সুভলং ঝর্না যে কাউকে বিমোহিত করে তুলে। পাহাড়ি ঝর্ণার স্বচ্ছ জলের ধারায় গা ভেজাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাঙ্গামাটিতে ছুটে আসেন পর্যটকরা। একেক ঋতুতে একেক রকম রূপে সাজে পাহাড়ের প্রকৃতি। এর মাঝে রাঙ্গামাটি ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ এই ঝুলন্ত সেতু। যেকোনো পর্যটক রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে এলে পর্যটনের ঝুলন্ত সেতু না দেখে যেতে চান না। বিশ্ব পর্যটন দিবসে রাঙামাটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা সালাউদ্দিন বলেন, ‘ঝুলন্ত সেতু দেখতে এসেছি। এখন দেখি এটি পানির নিচে ঝুলছে। শুনেছি প্রতি বছর এই সময়ে সেতুটি পানির নেচে তলিয়ে যায়। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেতুর সংস্কার করে পানিতে যাতে না ডুবে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া রাঙ্গামাটিতে ঘোরাঘুরি করার আর কিছুই দেখছি না। শহরের ভেতর যেসব দেখার সব দেখা শেষ হয়ে গেছে। তাই হতাশ হয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে।’
কক্সবাজার থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক নিবিলাস দাশ বলেন, রাঙ্গামাটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন এই সেতু এভাবে পানিতে ডুবে থাকবে এটা আশা করা যায় না। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা শুধু এই সেতু দেখতে আসেন। কিন্তু তাদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। আর এই একটি পর্যটনের ঝুলন্ত সেতু পুরো রাঙ্গামাটিকে উপস্থাপন করে। এভাবে সেতুটি ডুবে যাওয়া রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পের জন্য ক্ষতিকারক। কর্তৃপক্ষের এটা নিয়ে ভাবা উচিত বলে আমি মনে করি।’
এদিকে, দীর্ঘদিন পর্যটনের এই সেতু পানিতে ডুবে থাকার কারণে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পর্যটক না থাকায় ট্যুরিস্ট বোট চালক থেকে শুরু করে ঝুলন্ত সেতু এলাকায় বসা ভ্রাম্যমাণ পাহাড়ি পণ্যের দোকানদার সবার মুখেই হতাশার ছাপ পড়েছে। অন্যদিকে পর্যটনের ঝুলন্ত সেতুটি সংস্কার ও সেতুটি আরও উঁচুতে স্থানান্তরসহ পর্যটন এলাকাটি পর্যটকদের জন্য আরও সৌন্দর্য বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আগত পর্যটকসহ স্থানীয়রা।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গামাটি শহরের একদম শেষ প্রান্তে অবস্থিত দুটো পাহাড়কে সংযুক্ত করে ১৯৮৫ সালে নির্মিত হয় এই ‘ক্যাবল স্টে ব্রিজটি’। প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এই সেতু দাঁড়িয়ে আছে মোটা ক্যাবল এবং দুই প্রান্তের চারটি পিলারের ওপর। সেতুর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানই এই সেতুর নকশা ও নির্মাণ করেছে বলে পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু সেই সময় হ্রদের পানির উচ্চতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের উচ্চতা নির্ধারণে সমস্যা করে। ফলে নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধনের দুই বছর পরই ১৯৮৭ সালে বর্ষা মৌসুমে সেতু পানির নিচে ডুবে যায়। সেই থেকে প্রায় নিয়ম করেই যে বছর ভারী বৃষ্টিপাত হয় সেই বছরই পানির নিচে ডুবে যায়। পাশাপাশি কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পানি সংরক্ষণ করে রাখার জন্য যখন বাঁধের জলকপাটগুলো বন্ধ করে রাখা হয় তখনো অতিরিক্ত পানির কারণে ডুবে যায় পর্যটনের আকর্ষণীয় এই সেতু।
রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ঝুলন্ত সেতুর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। আর কিছুদিনের মধ্যে পানি কমে গিয়ে চলাচলে উপযোগী হলে তা সংস্কার করে ঝুলন্ত সেতু চলাচলে সবার জন্য আবারও উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আর এই ঝুলন্ত সেতু প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পানি নিচে তলিয়ে যায়। তাই সেতুটি উঁচুতে স্থানান্তরের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম