নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে প্রতিদিনই হাজার হাজার পিস ইয়াবাসহ নানা মাদক উদ্ধার হচ্ছে। সম্প্রতি পাওয়া যাচ্ছে নতুন মাদক আইসও। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলো মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তাদের তথ্যমতে, শুধু ঢাকাতেই সাড়ে তিন হাজার মাদক কারবারি রয়েছে। শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তরের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা বিভাগের প্রধান ও সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান। সম্প্রতি রাজধানীর গুলশান, ভাটারা, কুড়িল ও রমনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫৬০ গ্রাম আইস ও ১২০০ পিস ইয়াবাসহ পাঁচ মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) দাবি, এটি এখন পর্যন্ত ঢাকায় জব্দ হওয়া আইসের সবচেয়ে বড় চালান। এ সময় দুটি প্রাইভেটকারও জব্দ করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য কোটি টাকা। ফজলুর রহমান বলেন, আইস ২০০৭ সালে প্রথম ধরা পড়েছিল।
দীর্ঘদিন অস্তিত্ব না থাকলেও ২০১৯ সাল থেকে আবার নতুন করে আইসের প্রভাব বাড়ছে। গত আগস্টে আমরা একজনকে গ্রেপ্তার করি। তার তথ্যের ভিত্তিতে গত ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর আমরা অভিযান পরিচালনা করি। সেই অভিযানে আমরা ১০ জনের সিন্ডিকেটকে আটক করতে সক্ষম হই। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা আবারও নিজেদের প্রযুক্তি ও মেধা কাজে লাগিয়ে এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করি। তিনি বলেন, মাদকটির প্রতি গ্রামের দামই প্রায় ১০ হাজার ৫০০ টাকা। এই মাদকসেবন ব্যয়বহুল হওয়ায় সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরাই এই মাদকের সঙ্গে জড়িত হয়। এই গ্রেপ্তার পাঁচজনও সচ্ছল পরিবারের। যেমন- জাকারিয়া অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়াশোনা করে এসেছে। তারেক আহম্মেদ যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে। এ ছাড়া জসিম উদ্দিন বাড়ি ও গাড়ির মালিক। সবাই অর্থ ও বিত্তশালী। এরা কেন জড়িয়ে পড়ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, মূলত এরা প্রলোভনে এই অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। আইসের দাম অনেক বেশি হওয়ায় মাদকদ্রব্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অধিক টাকা আয়ের লোভে প্রলোভন দেখিয়ে এসব কাজে তাদের নিয়ে আসে। মাদকের সঙ্গে জড়িত মূলহোতারা কেন আটক হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত গডফাদারেরা গা ঢাকা দিয়ে থাকে। অর্থ বিনিয়োগ ও সহযোগিতা করলেও সাধারণত তারা আড়ালে থাকে। আর সংশ্লিষ্টদের এমনভাবে ট্রেইন করা হয়, তাদের যত কিছুই করা হয় মূল হোতাদের তথ্য দিতে চায় না। তারপরেও কেবল ঢাকারই প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জনের মতো মাদক কারবারির তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। আপনারা যাদের তালিকা পেয়েছেন তাদের একসঙ্গে গ্রেপ্তার করছেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তথ্য থাকলেও আটক করার সময়ে তাদের কাছে যদি মাদক না পাওয়া যায় তাহলে আমরা ধরতে পারি না। আটক করার জন্য তাদের কাছে মাদক থাকতে হয়। আর এখন তারা দিনে চালান না করে রাতে করে কিংবা গভীর সমুদ্রে লেনদেন করে। আমরা আমাদের কৌশল পরিবর্তন করছি। আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। কোন দেশ থেকে এই নতুন মাদক আইস আসছে জানতে চাইলে ফজলুর রহমান বলেন, এই মাদক মূলত মিয়ানমার থেকেই বাংলাদেশে আসছে। দেশে এই মাদক তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি-না প্রশ্নে তিনি বলেন, এই মাদক দেশে তৈরি হওয়ার সুযোগ নেই। যে উপাদান এই আইস উৎপাদনে প্রয়োজন হয় তা আমাদের দেশে পাওয়া যায় না। কিছু উপাদান ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হলেও এগুলো অনেক আগেই দেশ থেকে ব্যান করা হয়েছে। যারা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত তারা আইসের সঙ্গেও জড়িত কি-না জানতে চাইলে ফজলুর রহমান বলেন, হ্যাঁ, ইয়াবা ব্যবসায়ীরাই এই আইসের ব্যবসা শুরু করছে। এখনো বিস্তার বড়ভাবে না হলেও তারা বাজার পাওয়ার চেষ্টা করছে। বেশি দাম হওয়ায় এখনো সেভাবে কাস্টমার পায়নি তারা। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তরের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান ও সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম