ষ্টাফ রির্পোটার :
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর সহ দেশের বিভিন্ন স্থল বন্দর টানা চার দিন বাণিজ্য কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর গত সোমবার সকালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক হয়েছে। সরকারীভাবে বাণিজ্য কার্যক্রম স্বাধ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ থাকলেও বন্ধ রয়েছে জনসাধারনের যাতায়ত।
জানা গেছে, বৈধ স্থলবন্দর ছাড়াও দুই দেশের বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা রয়েছে। যেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। অনেক এলাকা আছে যেখানে সীমান্তরেখা বাড়ির ভেতর দিয়ে গেছে। এসব পথ দিয়ে অবৈধভাবে বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিদিন দেশে প্রবেশ করছে। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ থাকলেও সেখানে আটকে পড়া অসংখ্য বাংলাদেশী মানুষ প্রতিদিন দেশে প্রবেশ করছে। সীমান্তবর্তী ২৯টি জেলা দিয়ে বৈধ ও অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করছে।
বৈধ পথে যারা ফিরছেন, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু যারা অবৈধ পথে ফিরছেন, তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সীমান্তের প্রায় ২৯টি জেলায় বেড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, অবৈধভাবে ভারত থেকে মানুষ আসা বন্ধ না হওয়া দেশের জন্য বিপজ্জনক। যেকোনো সময় দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের পূর্ণ সংক্রমণ শুরু হতে পারে। সেই ধাক্কা সামাল দেয়া কঠিন হবে। এ থেকে রা পেতে সীমান্তে সুরা নিশ্চিতের বিকল্প নেই।
তারা আরো বলেন, ভারত থেকে আসা অনেক বাংলাদেশির শরীরেই সংক্রমণ ধরা পড়ছে। তাদের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের রোগী পাঁচজন। এ কারণে শিগগিরই সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা প্রয়োজন।
সম্প্রতি সাতীরায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারতফেরত ১৩৯ জনের মধ্যে ১১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সম্প্রতি একজন ভারতীয় নাগরিক অবৈধ পথে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। তার শ্বশুরবাড়ি বেনাপোলে। পুলিশ তাকে আটক করে বেনাপোলের একটি হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়েছে।
সম্প্রতি যশোরের একটি স্থলবন্দর দিয়ে বৈধভাবে এক দিনে চারজন দেশে প্রবেশ করেছেন। একই দিন ওই এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করে ৩০ জন। আবার বৈধভাবে ভারত থেকে আসা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয়-স্বজনদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা যাচ্ছে না। এছাড়া ঈদ-পরবর্তী ফিরতি যাত্রায়ও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। ১০-১২ বার গাড়ি বদল করে ফিরছেন অনেকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। অবৈধভাবে ভারত থেকে মানুষ আসা আমাদের জন্য ভয়ের কারণ। সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ না করলে সামনে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্য অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, এত বড় সীমান্ত সুরা দেয়া কঠিন। এ কারণে টিকা উৎপাদন ও সংগ্রহে জোর দিতে হবে। ব্যাপক হারে টিকা দেয়া ছাড়া উপায় নেই। দেশের ৫-১০ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, সীমান্তে সুরা নিশ্চিত করতে যা যা করার প্রয়োজন তা করা হয়েছে। করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থাপনাও ভালো।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের গাইডলাইন মেনে আমরা স্বাস্থ্য সুরার ব্যবস্থা করছি।
এদিকে ৭-১৭ মে ভারতফেরত পাঁচ বাংলাদেশির শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পেয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার। এ সংক্রান্ত ফলাফল জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ভারতীয় ধরন চিহ্নিত হওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইইডিসিআর বিস্তারিত বলতে পারবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি