নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাশ্রয়ী দামে টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল ও ইলেট্রনিক পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সরকারি অনুমোদনহীন ও লাইসেন্সবিহীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘থলেডটকম’ ও ‘উইকমডটকম’র হেড অব অপারেশন মো. নজরুল ইসলামসহ প্রতিষ্ঠানের ৬ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি জানায়, বিজ্ঞাপনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য সরহরাহ করার শর্তে টাকা পরিশোধ করে ভুক্তভোগীরা। কিন্তু টাকা পরিশোধের পর নির্ধারিত সময়ে পণ্য দেয়নি ‘থলেডটকম’ ও ‘উইকমডটকম’। মো. নজরুল ইসলাম ছাড়াও অন্য গ্রেপ্তাররা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্ট কর্মকর্তা মো. সোহেল হোসেন (২৭), ডিজিটাল কমিউনিকেশন কর্মকর্তা মো. তারেক মাহমুদ অনিক (২৮), সেলস এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন ওরফে পিয়াস (২৭), কল সেন্টার এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা মুন্না পারভেজ (২৬) ও সুপার ভাইজার মো. মাসুম হাসান (২৭)। সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে সিআইডি হেডকোর্টার্সে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘থলেডটকম’ ও ‘উইকমডটকম’র বিভিন্ন পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তাররা কম মূল্যে বিভিন্ন পণ্য- টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রিক পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ফেসবুক পেজে ও অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে অফার দেয়। ভিকটিমরা বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে যোগাযোগ করার পরে জানতে পারেন, টাকা পরিশোধ করলে ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে। ভিকটিমরা এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে বিভিন্ন তারিখে চেকের মাধ্যমে ও নগদ প্রায় আড়াই কোটি টাকা দেন। গ্রাহকদের টাকা হাতে পাওয়ার পর ৫০ দিন অতিবাহিত হলেও পণ্য সরবরাহ না করে অপেক্ষা করতে বলে প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে মামলার বাদী খায়রুল আলম মীর প্রতিষ্ঠানটির অফিসে গেলে তারা বাদীসহ ভিকটিমদের বিভিন্ন অংকের টাকার চেক দেয়। সেই চেক নিয়ে ভিকটিমরা ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করতে গেলে ‘অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা নেই’ বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়। প্রতিষ্ঠানটি এভাবে হাজার হাজার লোকের কাছ থেকে মিথ্যা ও চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করে। ‘থলেডটকম’ ও ‘উইকমডটকম’র অফিস তল্লাশি করে অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র, গন্তব্য লজিস্টিকস সার্ভিস লিমিটেড এজেন্ট সংক্রান্ত চুক্তিপত্র, জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত ঊঠঊঘঞ গঅঘঅএঊগঊঘঞ অএজঊঊগঊঘঞ সংক্রান্ত চুক্তিপত্রসহ বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, গ্রাহকদের কাছ থেকে চেক রিসিভ ইনফরমেশন ঈচট, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, ফটোকপি মেশিন, রেজিস্টার দুটি ও টাকা গণনার মেশিন জব্দ করা হয়। এদিকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নামে যারা টাকা নিয়ে পণ্য ডেলিভারি দেয় না ও টাকা পরিশোধ না করে নিজেরা আত্মসাৎ করে, এমন অন্তত ৬০টি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তালিকাভুক্ত ৩০ থেকে ৩২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকেই রাখা হয়েছে নজরদারিতে। সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সিআইডিও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ শুরু করে। কাজ করতে গিয়ে দেখা যায়, কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে ভুক্তভোগীরা টাকা দিলেও দিনের পর দিন পণ্য ডেলিভারি না পেয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ কর্মকর্তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে ও সিআইডির অনুসন্ধানে ৬০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩০ থেকে ৩২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান সিআইডির নজরদারিতে রয়েছে। তালিকায় থাকা ৬০টি প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে আনুমানিক কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, কত টাকা হাতিয়েছে এটি হিসাব না করে বলা যাবে না। পরবর্তীতে হিসাব করে জানানো হবে। ডিআইজি ইমাম হোসেন আরও বলেন, বাংলাদেশে কিছু ভালো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত, এমন ৩০ থেকে ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক নারী যারা ঘরে থাকে তারাও ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো নিয়ে সমস্যা নয়। মূল সমস্যা হলো, কিছু নামধারী প্রতিষ্ঠান অনুমোদন না নিয়ে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমরা শুধু তাদের নজরদারিতে রেখেছি। এ ধরনের প্রতারণা যারা করবে সিআইডি তাদের আইনের আওতায় আনবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি