অনলাইন ডেস্ক :
পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫-এর সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। গত বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৭টা ৫০ মিনিটে ওডিশা উপকূলের এপিজে আবদুল কালাম দ্বীপ থেকে এই আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। বেইজিংয়ের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বের মধ্যে সফলভাবে এ পরীক্ষার কথা জানায় দিল্লি, যার আওতার মধ্যে এসেছে চীনের একেবারে উত্তরাঞ্চলের এলাকাগুলোও। অগ্নি-৫-এর মাধ্যমে বেইজিংকে টেক্কা দেওয়া যাবে উল্লেখ করে এর সফল পরীক্ষাকে আঞ্চলিক প্রতিপক্ষের জন্য একটি হুঁশিয়ারি বলে দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এএফপির। খবরে বলা হয়েছে, ভূমি থেকে ছোঁড়া অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্র পাঁচ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত পাড়ি দিতে সক্ষম। এটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) শ্রেণির। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, এ ক্ষেপণাস্ত্র ভূমিতে থাকা লক্ষ্যবস্তুকে একেবারে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারে।ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের রাষ্ট্রীয় নীতির বিশ্বাসযোগ্য বাধ্যবাধকতা মেনে অগ্নি-৫-এর পরীক্ষা চালানো হয়েছে, যা সফল। ওই নীতিতে ‘প্রথমে আক্রমণ নয়’ কৌশলকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।ভারত এমন সময় এ পরীক্ষা চালিয়েছে, যার কয়েক দিন আগে পারমাণকি অস্ত্র বহনে সক্ষম সুপারসনিক ক্ষেপাণস্ত্রের উৎক্ষেপণ করেছে চীন। যা পৃথিবীর লো অরবিট প্রদক্ষিণ করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। যদিও এ খবর অস্বীকার করেছে বেইজিং। তাদের দাবি, নিয়মিতভাবে মহাকাশে যান পাঠানোর অংশ হিসেবে একটি মহাকাশ যানের পরীক্ষা করা হয়েছে। যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-চীনের বিভিন্ন সীমান্তে তুমুল উত্তেজনা দেখা গেছে। গত বছর পূর্ব লাদাখ সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষে ভারতের ২০ সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। বেইজিংয়ের হুমকি মোকাবিলায় সম্প্রতি অরুণাচল সীমান্তে ভারী অস্ত্রসহ সেনা বাড়িয়েছে ভারত। এ ছাড়া গত বছর চীনের পাস করা সীমান্ত আইন নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়েছে। যা নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে দিল্লি। এরপর থেকে পরমাণু অস্ত্রধারী প্রভাবশালী এ দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে তিন স্তরের সলিড ফুলেয়ড ইঞ্জিন ব্যবহারযোগ্য এই অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় ভারত। এটাকে ভারতের ভান্ডারে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী ও কার্যকর অত্যাধুনিক অস্ত্র বলা হচ্ছে।দিল্লির দাবি, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারবে; এটি দিয়ে পরমাণু হামলাও চালানো যাবে। যা দিয়ে চীনকে টেক্কা দেওয়াও সম্ভব বলে জানিয়েছে । তাদের দাবি, এটাকে এখন ‘বেইজিংয়ের জন্য দিল্লির বার্তা’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অগ্নি সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তৈরি করেছে ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)। তাদের তৈরি অগ্নি-১ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৭০০ কিলোমিটার, অগ্নি-২-এর দুই হাজার কিলোমিটার, অগ্নি-৩ পাড়ি দিতে পারে আড়াই হাজার কিলোমিটার আর অগ্নি-৪-এর পাল্লা সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি। ভারত ২০১২ সালে প্রথম অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল। চলতি বছরের জুনে তারা পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ‘অগ্নি প্রাইম’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রেরও পরীক্ষা চালায়। এটিও ওডিশা উপকূলবর্তী কোনো একটি এলাকা থেকে ছোঁড়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু