অনলাইন ডেস্ক :
পাকিস্তান সিরিজ শেষ হতে না হতেই নিউজিল্যান্ডের পথে উড়বে বাংলাদেশ দল। সেই উড়ানে হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও থাকবেন কি না, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীকে সামনে পেয়ে সে জিজ্ঞাসাও থাকল সংবাদমাধ্যমের। জবাবে তিনি বললেন, ‘উনি যাবেন, এখন পর্যন্ত সে রকমই ঠিক হয়ে আছে।’ ঠিক হয়ে আছে যে দুই টেস্টের সফরে এই দক্ষিণ আফ্রিকান যাচ্ছেন ‘আপৎকালীন’ কোচ হিসেবে বিশেষ ব্যবস্থায়। যদিও গত ১ ডিসেম্বর থেকে বিসিবির সঙ্গে তাঁর দুই বছরের নতুন চুক্তি কার্যকর হয়ে যাওয়ার কথা। যে চুক্তির প্রথম এক বছর ‘গ্যারান্টিড’ বলে ডমিঙ্গোকে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও ছিল দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসনের। এক মাস কাজ করিয়ে বিদায় করলে দিতে হতো বাকি ১১ মাসের বেতনও, যা এক লাখ ৮৭ হাজার ইউএস ডলারের মতো। তবে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তর এই ব্যয় এড়ানোর পথও বিসিবি খুঁজে বের করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার এক পরিচালক। ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট সম্পাদিত ডমিঙ্গোর সঙ্গে আগের চুক্তির ১৮.১ ধারাবলে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করার চিঠিতে তাই তারিখ দেওয়া হয়েছে নতুন চুক্তি শুরুর ঠিক আগের দিন অর্থাৎ ৩০ নভেম্বর। গত আগস্টে দুই বছরের পুরনো চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা ওই দিন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থাকায়। এই বিশ্ব আসরে দল চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ার আগেই ডমিঙ্গো দুই বছরের নতুন চুক্তিতে সই করে ফেলায় মনে হচ্ছিল তাঁকে সহসাই চাকরিচ্যুত করার পথ খোলা নেই। ভিন্ন পথের সন্ধান পেতেই অবশ্য আর বিলম্বও করেনি বিসিবি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিচালক ডমিঙ্গোকে এভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তে আইনগত ঝামেলায় পড়তে হবে না বলেও আশ্বস্ত, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েই নিয়েছি। সে জন্যই চিঠিতে তারিখ ৩০ নভেম্বর দেওয়া। আগের চুক্তির ১৮.১ ধারায় বলা আছে, বিসিবি কোনো কারণ ব্যাখ্যা না করেই তাঁকে যখন-তখন টার্মিনেট করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্য তাঁকে তিন মাসের বেতন দিতে হবে। আগের চুক্তি অনুযায়ী যে টাকা হয়, তা আমরা তাঁকে দিয়েও দেব।’ বোর্ডেরই আরেকটি সূত্র অবশ্য মনে করছে যে চাইলে আইনি পথ বেছে নিতে পারতেন ডমিঙ্গোও। যেহেতু আরেকটি নতুন চুক্তিতে তিনি এর মধ্যেই সই করে ফেলেছেন। তবে বাংলাদেশ দলের হেড কোচ হিসেবে তাঁর পৃথিবী বেশ কঠিন হয়ে যাওয়ায় সে আগ্রহও এই প্রোটিয়ার মধ্যে দেখা যায়নি বলে জানা গেছে। পাকিস্তান সিরিজের শুরু থেকেই দলের ‘মাথা’ হিসেবে তাঁর ওপর বসানো হয়েছে বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদকে। এমনিতে বিদেশ সফরে হোটেলে সুইট রুম পাওয়ার কথা নয় তাঁর। ম্যানেজার আর অধিনায়কই তা পেয়ে থাকেন। এতদিন ডমিঙ্গো তা-ও পেয়ে এসেছেন দলের ম্যানেজার সেটি তাঁকে ছেড়ে দিয়ে আসায়। নিউজিল্যান্ড সফরে তা আর হচ্ছে না। আরো অসন্মানজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার আগেই তাই চাকরি হারানোর নিয়তিও মেনে নিচ্ছেন একরকম। সেটি জেনে যাওয়ায়ই চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে খুব বিমর্ষও দেখাচ্ছিল ডমিঙ্গোকে। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নিজে থেকে সাংবাদিকদের আরো কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞেস করার অনুরোধ করেছিলেন। ওই সময় এমন কিছু কথা বলেন, যা আগে কখনোই তাঁকে বলতে শোনা যায়নি। যেমন বলেছিলেন, ‘হতাশই লাগে, যখন দেখে মনে হয় (টেস্টে) আমরা জিততেই জানি না।’ আগে কখনো বিসিবিকেও এভাবে জ্ঞান দিতে শোনা যায়নি তাঁকে, ‘বাংলাদেশে মনে হয় টেস্টের চেয়ে সাদা বলের ক্রিকেটটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ মুহূর্তে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পেতে যাতে বেশি সময় না লাগে, সে জন্য বিসিবির এদিকটায় মনোযোগী হওয়া দরকার।’
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা