অনলাইন ডেস্ক :
দীর্ঘ ১৬ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল। জার্মানির রাজনীতিতে তাঁর অবদান স্মরণীয় করে রাখতে বিদায় বেলায় দেয়া হয় রাষ্ট্রীয় সম্মান। দেশটির সেনবাহিনীর পরিবেশনায় সঙ্গীত আর কুচকাওয়াজের মাধ্যমে দেয়া সংবর্ধনায় বিদায়ী চ্যান্সেলরের কন্ঠে ছিলো, দেশের সংকটে, আনন্দে কিংবা বেদনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান তিনি। গত দুই দশক ধরে জার্মানি আর আঙ্গেলা মার্কেল যেন সমার্থক শব্দ। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধীরে ধীরে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ পরাশক্তি হয়ে ওঠা এই দেশটির উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় নিষ্ঠা, দৃঢ়তা ও সংকল্প চিত্তের পরিচয় দিয়েছেন যে কয়েকজন জার্মান চ্যান্সেলর, তাদের মধ্যে আঙ্গেলা মার্কেল অন্যতম। তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা কারণে দেশটির সর্বস্তরের মানুষের কাছে হয়ে উঠেন “মুটি” বাংলায় যার অর্থ “মা”। চ্যান্সেলর হিসেবে বিচক্ষণ মার্কেলকে আর হয়তো দেখা যাবেনা ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, জার্মানির জাতীয় সংসদ, দেশটির কোন সংবাদ সম্মেলনে কিংবা কোন সংকটে বা জার্মানির বিশেষ কোন অর্জনে। কারণ চ্যান্সেলর হিসেবে বিদায়ের শেষ ঘণ্টা অমোঘ নিয়মেই বেজে গেছে। সেই সাথে ইতি ঘটলো বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের। মার্কেল বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন শেষে দেশের জন্য তাঁর সব অর্জনকে সম্মান জানাতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বেন্ডলার ব্লকে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ।বাদ্যযন্ত্রের প্রাণবন্ত মুর্ছনায় শেষ বারের মত বিদায়ী ভাষণেও পুরো জাতিকে অন্তরের গভীর থেকে ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি সফল এই রাষ্ট্রনায়ক। মার্কেল বলেন, চ্যান্সেলর হিসেবে আমি দীর্ঘ এই রাজনৈতিক জীবনে দেশের জন্য যা করতে পেরেছি কিংবাকরার সুযোগ দিয়েছেন তার জন্য সর্বক্ষেত্রের সবাইকে হৃদয়ের গভীরতা থেকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আরও বলেন, জাঁতি হিসেবে আমাদের সবাইকে জলবায়ু পরিবর্তন, ডিজিটালাজেশন সহ মাইগ্রেশনের মত বিষয়ে আরো গভীর মনোযোগ দিতে হবে। সকল মিথ্যা, অসত্য, আর অনিয়মের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে যতদিন আমরা এক থাকব ততদিনই এই দেশের গৌরব সমুন্নত থাকবে। সবশেষে প্রার্থণা করি সবার অন্তর হোক আনন্দময় ও নির্মল। তীব্র শীত উপেক্ষা করে বিদায়ী এই সন্ধ্যায় মার্কেলকে বিদায় জানাতে আসেন ২০০ জন রাষ্ট্রীয় অথিতি। যেখানে ছিলেন তারই মন্ত্রিপরিষদের ৬২ জন। ভালবাসায় সিক্ত মার্কেল লাল গোলাপ পেয়ে জানান, কিভাবে কেটে গেলো ১৬টি বছর তিনি বুঝতেই পারেননি। বিদায়ী এই চ্যান্সেলর শুধু আঙ্গেলা মার্কেল হিসেবে পরিচিত হলেও তাঁর পুরো নাম আঙ্গেলা ডরথিয়া মার্কেল। জন্ম ১৭ জুলাই ১৯৫৪ ইংরেজিতে। সেময় পূর্ব জার্মানি থেকেই শুরু হয় তাঁর রাজনীতি। ধীরে ধীরে ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির সিডিইউ’র হয়ে ওঠেন প্রধান। দলের নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি মনোনিবেশ করেন দেশ গঠনে। এর ধারাবাহিকতায় দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, ইইউ’র প্রতিষ্ঠা, জলবায়ুগত সমস্যা নিরসন, নবায়নযোগ্য জ¦ালানি শক্তির বিকাশ ও দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে মজবুত করাসহ, শ্রমের ন্যায্য মজুরি প্রদান, বয়স্কদের পেনশন ভাতা ও অভিবাসন সংকট সমাধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে মার্কেলের অবদান চিরকাল মনে রাখবে জার্মানি।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু