অনলাইন ডেস্ক :
ভারতের নাগাল্যান্ডে সেনাবাহিনীর গুলিতে ১৩ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হওয়ায় উত্তেজনা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। সাধারণ জনগন এর প্রতিবাদে সহিংস হয়ে উঠেছে। গত রোববারও তারা মন শহরে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। পুড়িয়ে দিয়েছে সরকারি বিভিন্ন ভবন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্য সরকার ওই এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট এবং এসএমএস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। রিপোর্টে বলা হয়, সেনাদের গুলিতে বেসামরিক লোকজন নিহত হওয়ার ফলে মন জেলায় ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। এ শহরে গত রোববার সেনাদের ক্যাম্প অভিমুখে বিপুলসংখ্যক মানুষ বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা সহিংস হয়ে ওঠে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) ভারতের পার্লামেন্টে বিবৃতি দেয়ার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। উল্লেখ্য নাগাল্যান্ড ভারতের এমন একটি রাজ্য যেখানে বেশ কয়েক দশক ধরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চলছে। তবে কয়েক বছরে তুলনামূলকভাবে রাজ্যটি ছিল শান্ত। কারণ, সেখানকার সশস্ত্র গ্রুপগুলো ভারত সরকারের সঙ্গে সমঝোতা প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে। কিন্তু কোনিয়াক ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট হোনাং কোনিয়াক বলেছেন, এ হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে জনগণ প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। তার ভাষায়- যে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা এই জনগণের অভিভাবক, তারাই নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে। উল্লেখ্য গত শনিবার কয়লাখনিতে কাজ শেষে একটি ট্রাকে করে ঘরে ফেরার সময় তাদেরকে জঙ্গি ভেবে তাতে সেনাবাহিনী গুলি করে। এতে কমপক্ষে ছয় কয়লা শ্রমিক নিহত হন। এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলা চালায়। কমপক্ষে দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় সেনাবাহিনী তাদের প্রতি গুলি নিক্ষেপ করে। ফলে আরও ৭ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হন সেখানে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নাগাল্যান্ড সরকার সেখানে প্রেরণ করে। এর আগে সরকার সেখানে ইন্টারনেট মোবাইল ইন্টারনেট এবং এসএমএস সার্ভিস বন্ধ করে দেয়। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা সমস্যার কারণে এসব সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে এই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে গত রোববার সন্ধ্যায়। নাগাল্যান্ড পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সন্দ্বীপ এম তামগাড়ে নিশ্চিত করে বলেছেন, পরিস্থিতি উত্তেজনাকর অবস্থায় রয়েছে। তামগাড়ের তত্ত্বাবধানে গঠিত পাঁচ পুলিশ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে এ ঘটনা তদন্ত করার জন্য। এক মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ওদিকে স্পিয়ার কোর অব ইন্ডিয়ান আর্মি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রাণহানির তদন্ত করা হচ্ছে উচ্চপর্যায় থেকে। আইনি ধারা অনুযায়ী এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য এই সহিংসতার সময় কমপক্ষে একজন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১১ জন বেসামরিক ব্যক্তি। নাগাল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র সচিব অভিজিৎ সিনহা বলেছেন আহতদের চারজনকে পাঠানো হয়েছে রাজ্যের রাজধানী ডিমাপুরে। অন্য দু’জনকে মন শহরে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। দুজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে প্রতিবেশী আসামের ধিব্রুগড়ে। ওটিং এলাকার বাসিন্দা খিয়াটওয়াং কোনিয়াক বলেছেন ঘটনার দিন জনগণ গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছে। এর কয়েক ঘন্টা পরে যখন আর শ্রমিকরা বাড়ি ফিরছিলেন না, তখন আমরা তাদের সন্ধানে বের হই। গ্রামবাসী বলছেন তাদের গ্রাম থেকে অল্প দূরেই একটি পিকাপ ট্রাকে ওইসব মৃতদেহ দেখতে পান তারা। ট্রাকটি সেনাবাহিনীর। সেনারা এসব মৃতদেহ সরিয়ে নিচ্ছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর থেকেই উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। উত্তেজিত জনতা তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন এ সময় নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা তাদের দিকে সরাসরি গুলি চালায়। ভারতীয় জনতা পার্টির জেলা প্রেসিডেন্ট নিওয়াঙ কোনিয়াক বলেন আমার গাড়িতে দলীয় পতাকা ছিল। তা সত্ত্বেও আমাদের দিকে সেনারা গুলি চালিয়েছে। এ সময় তিনি জীবন বাঁচাতে দৌড়ে পালান। তার গাড়িতে থাকা তিনজনকে গুলি করা হয়। তিনি বলেন তার গাড়ির চালক এবং ভাতিজার পায়ে গুলি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু