November 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, December 9th, 2021, 9:00 pm

হারুনের ৫ বছরের কারাদন্ড বহাল, নতুন করে কারাভোগ করতে হবে না

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি সুবিধা নিয়ে পরবর্তীতে তা বিক্রি করে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় বিএনপির এমপি হারুন অর রশীদকে নিম্ন আদালতের দেওয়া পাঁচ বছরের সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. সেলিমের একক বেঞ্চ এমপি হারুনের আপিল আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দেন। এ মামলায় তিন আসামির কারাভোগের সময়কালকে (১৬ মাস) সাজা হিসেবে গণ্য করে তাদের আপিল খারিজ করেন হাইকোর্ট। ফলে সাজা বহাল থাকলেও এমপি হারুনকে নতুন করে কারাভোগ করতে হবে না। এদিন আদালতে এমপি হারুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তার সঙ্গে ছিলেন সৈয়দ মিজানুর রহমান ও এইচ এম সানজীদ সিদ্দিকী। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো.খুরশীদ আলম খান। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম দন্ডবিধির ৪০৯ ধারায় এমপি হারুনকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেন। একইসঙ্গে ওই রায়ে তাকে ৫০ লাখ টাকা অর্থদ-, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ড দেন আদালত। বিচারিক আদালতের ওই রায়ে এমপি হারুন ছাড়াও চ্যানেল নাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসামি এনায়েতুর রহমান বাপ্পীকে (এমডি, চ্যানেল ৯) ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় দুই বছর সশ্রম কারাদ- ও এক লাখ টাকা অর্থদ-, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং অপর আসামি ইশতিয়াক সাদেককে তিন বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ৪০ লাখ টাকা অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছিল। বিচারিক আদালতের দেওয়া পাঁচ বছরের সাজার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল করেন বিএনপি নেতা হারুন অর রশীদ। পরে উচ্চ আদালত আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে অর্থদন্ড স্থগিত এবং আসামিদের জামিন আদেশ দেন। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, হারুন চার দলীয় জোট সরকারের সময় ২০০৫ সালে ব্রিটেন থেকে একটি হ্যামার ব্র্যান্ডের গাড়ি শুল্কমুক্তভাবে ক্রয় করে। গাড়িটি তিনি পরে আরেক আসামি ইশতিয়াক সাদেকের কাছে ৯৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। এরপর সাদেক গাড়িটি চ্যানেল নাইনের এমডি বাপ্পীর কাছে বিক্রি করেন। নিয়ম অনুযায়ী শুল্কমুক্ত গাড়ি তিন বছরের মধ্যে বিক্রি করলে শুল্ক দিতে হয়, কিন্তু আসামি হারুন শুল্ক না দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করেন। এ অভিযোগে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক ইউনুছ আলী এমপি হারুনসহ তিনজনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০০৭ সালের ১৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। ওই বছরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় এবং আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। হারুন অর রশীদ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হন।
এমপি পদে থাকে নিয়ে আইনজীবীদের দ্বিমত: হারুন অর রশীদের দন্ডের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ হওয়ায় পরেও সংসদ সদস্য (এমপি) পদে থাকতে বাধা নেই বলে মনে করেন তার আইনজীবী। বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. সেলিমের বেঞ্চে দেওয়া ওই রায়ের পর তার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন এ কথা জানান। তিনি বলেন, হারুন অর রশীদের সাজা মডিফাই করে তাকে সার্ভ আউট অর্থাৎ এ মামলায় তিনি প্রায় ১৬ মাস জেলে ছিলেন, সেই ১৬ মাস সাজা বহাল রাখা হয়েছে। সাজা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা বিক্ষুব্ধ। উনি নির্দোষ। উনি গাড়ি বিক্রি করেননি। কোনো অপরাধও করেনি। তাই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করবো। সংসদ সদস্য পদে বহাল থাকার বিষয়ে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, যেহেতু ১৬ মাস সাজা বহাল রয়েছে তাই তার সংসদ সদস্য থাকতে, নির্বাচন করতে আইনগত কোনো বাধা নেই। কারণ সংসদ সদস্য পদ যেতে হলে সংবিধান অনুসারে কমপক্ষে দুই বছর সাজা হতে হবে।
অন্যদিকে, হারুন অর রশীদের দন্ডের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ হওয়ায় তার সংসদ সদস্য (এমপি) পদ থাকবে না বলে মনে করেন দুদকের আইনজীবী। রায়ের পর দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তাদের আপিল খারিজ হয়েছে। বিচারিক আদালতের সাজা বহাল। তবে যতদিন জেল খেটেছেন (প্রায় ১৬ মাস) সেটাকে দন্ড হিসেবে গণ্য করে সার্ভ আউট করে দিয়েছেন। মানে হচ্ছে ওনাকে আর জেলে যেতে হবে না। খুরশীদ আলম খান আরও বলেন, এখানে একটি সাংবিধানিক প্রশ্ন চলে আসে। ওনার সদস্য পদ থাকে কিনা। সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুসারে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অনূন্য দুই বৎসরের কারাদন্ডে দন্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে। তিনি বলেন, আজকে হাইকোর্ট যে রায় দিলেন সেখানে বিচারিক আদালতের রায়টা বহাল হয়ে গেল। তার মানে তার সাজা বহাল। কিন্তু তিনি যে সময়টা কাস্টডিতে ছিলেন সেটা সার্ভ আউট হলো। তার মানে হলো, আপিলের রায় শুনে আমি মনে করি, ওনার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না।