September 21, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, December 25th, 2021, 7:26 pm

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা বাড়ছে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা ক্রমাগত বাড়ছে। ইতিমধ্যে এদেশের কৃষিপণ্য প্রতিবেশী দেশ ভারত, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের বাজার জয় করেছে। বিশ্বব্যাপী করোনার মহামারির প্রভাবের মধ্যেও কৃষিপণ্য রপ্তানিতে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। আর চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেই (জুলাই-নভেম্বর) কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে প্রায় ৫৬ কোটি ডলার। প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় তা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। ওই আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস এলাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফভিএলপিইএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানির ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে ১১০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত সময়ের আগেই পূরণ করা সম্ভব হবে। এ নিয়ে দেশের উদ্যোক্তা ও সরকারের নীতি-নির্ধারকরা আরো বড় স্বপ্ন দেখছে। দেশের কৃষিপণ্যের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি যুক্তরাজ্য এবং নেদারল্যান্ডস সফর করেছে। ওই সময় ব্রিটিশ সুপারশপ সেইন্সবারি ও টেসকো বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাছাড়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক দেশ নেদারল্যান্ডসের একটি কারিগরি দল আগামী মার্চ মাসে সহায়তা দিতে আসছে বাংলাদেশে। রপ্তানিকারকরা মনে করেন অবকাঠামোগত সহায়তা পাওয়া গেলে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে কৃষিপণ্যে রপ্তানি দ্বিগুণ করা সম্ভব।
সূত্র জানায়, কৃষি খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে অংশীদারি বাড়ছে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, একই সঙ্গে নেদারল্যান্ডসও কৃষিতে বিশ্ববাজারের বড় অংশীদার। ওই অংশীদারির ফলে বাংলাদেশের উৎপাদন থেকে দক্ষতা উভয় ক্ষেত্রে লাভবান হবে। দেশটির প্রযুক্তি সহযোগিতা নেয়া গেলে পেঁয়াজ, টমেটো এবং আলুসহ কৃষিপণ্য দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। তাতে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে ২০০ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি করে আয় করা সম্ভব হবে। বর্তমানে দেশের কৃষিজাত পণ্যের একটি অংশ ভারতের সেভেন সিস্টারস এলাকায় যায়। ওই অঞ্চলে কৃষিপণ্যের মোট রপ্তানির ১৫-২০ শতাংশ যায়। তবে ভারতের কিছু অশুল্ক বাধা (নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার) আছে। ওসব বাধা দূর করা গেলে আরো ৫-১০ শতাংশ রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব।
সূত্র আরো জানায়, কৃষিপণ্য রপ্তানিতে সরকার নানা ধরনের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিলেও রপ্তানিকারকদের বিমানবন্দরে কার্গো সমস্যা, কৃষিপণ্য সংরক্ষণ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাছাড়া দক্ষ জনশক্তি এবং বিশ্বমানের স্বীকৃত মানসনদের সমস্যা তো আছেই।
এদিকে এ প্রসঙ্গে সবজি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস এলাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএলপিইএ) সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ক্রেতার চাহিদা অনুসারে কৃষিপণ্য রপ্তানি করা হলেও বাংলাদেশে সব পণ্যের ল্যাব নেই। সেজন্য কিছু কিছু পণ্যের মান পরীক্ষা গুজরাট এবং সিঙ্গাপুর থেকে করে আনা হয়। তাছাড়া কৃষিপণ্য রপ্তানিতে সরকার আন্তরিক হলেও সিভিল এভিয়েশনে কর্তৃপক্ষের সুনজর কম। সেজন্য বিমানবন্দরে স্ক্যানার সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং কার্গো বিমানে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পচনশীল পণ্য পরিবহন করার একটি নীতিমালা প্রয়োজন।
অন্যদিকে দেশের কৃষিপণ্যের বিশ্ববাজারের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিশ্ববাজারে কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে সরকার নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সম্ভাবনা যাচাই ও জ্ঞান অর্জনে সরকারি-বেসরকারি একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য সফর করেছে। সেখান থেকে ইতিবাচক সারা মিলেছে। ওই প্রেক্ষাপটে আগামী বছর মার্চ মাসে ডেনমার্কের একটি কারিগরি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসছে। ওই প্রতিনিধিদল দেশের কৃষি আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি সহায়তা, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও বিপণন বাড়াতে সহায়তা করবে। সরকার দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ দেশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ এখনো গ্রামে বাস করছে। তাদের আয় বাড়াতে, কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেজন্য কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়া হয়। সারে ভর্তুকি দেয়া হয়। তাছাড়া দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে শাক-সবজি, ফল দেশের বাইরে যায়। তাতে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাজার বাড়ছে। সরকার কৃষির সঙ্গে জড়িত মানুষদের আয় বাড়াতে চায়।